শিশুর ত্বকে সমস্যা? অ্যালার্জি বা আমবাত থেকে প্রতিকার মিলবে কীভাবে?

ছোটো বাচ্চা কে না ভালোবাসে? খুব কম মানুষ আছে। এই পৃথিবীতে যারা শিশু পছন্দ করে না বা ভালোবাসে না। নিষ্পাপ হাসির পাশাপাশি একটা বাচ্চার নরম তুলতুলে ত্বক একই রকম আকর্ষণীয়। কোনো দাগ বা বাইরের কষ্ট এই সুন্দর ত্বক সহ্য করতে পারে না। কিন্তু জন্মের পর অনেক সময় দেখা যায় যে বাইরের ধুলো বালি বা দূষণ সহ্য করতে না পেরে শিশুদের ত্বকে নানান রোগ দেখা যায়। অনেক সময় সাধারন ঠান্ডা গরমে বা ছোটো খাটো পোকার কামড়েও এই সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে যা থেকে চর্মরোগ, বা আম বাতের মত সমস্যা।

অনেকেই নতুন শিশুর শরীরে এই ধরনের সমস্যা দেখলে ভয় পান। কিন্তু এটা একেবারেই কোনো সমস্যা বা জটিল রোগ না। দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে আমরা এইগুলো নিয়ে বলবো এবং চেনার লক্ষণ এবং নিরাময়ের কিছু উপায় বলে দেব।

১. লক্ষণ এই সমস্যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় হাইভস বলা হয়, কখনো বা urticaria বলা হয়ে থাকে। সাধারণ বাংলায় অনেক সময় আম বাত বলে থাকেন অনেকে। খুব সাধারণ চোখেই এগুলোকে চিহ্নিত করা যায়।

দেখতে সাধারণত লাল বা গোলাপী আভা যুক্ত মসার কামড়ের মতো হয়। খুব ছোটো বা মাঝারি আকারের হতে পারে। লাল বা গোলাপী রঙের উঁচু ফোলা হয়ে থাকে। সাধারণত গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির মত দেখতে হয়। ছোটো কোনো জায়গা বা অনেকটা অংশ ধরে বিস্তৃত থাকতে পারে।অনেকসময় দেখতে অ্যালার্জি থেকে হওয়া ছাপের মত দেখতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে এটা চুলকায়। তবে এটা সবসময় হাইভসের ক্ষেত্রে হবে তার কোনো মানে নেই।

২. সময় সাধারণত এগুলো দুই থেকে তিনদিন থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক সপ্তাহ অব্দি এর প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। তবে অতিরিক্ত হলে বা কোনো শিশুর কোনো অ্যালার্জির কারণে হলে তা মাসের বেশি হতেও পারে। তবে সে সম্ভাবনা খুব কম শিশুর মধ্যেই দেখা যায়। কারণ সেই ক্ষেত্রে এই সমস্যা চলে গেলেও পরক্ষণে আবার আসতে পারে। সেরকম হলে সত্বর আপনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন এবং পরামর্শ নিন। হাইভস শরীরের যেকোনো অংশে হতে পারে। বেশি হয় কপাল, হাত, পা, বা পেট এবং বুকে।

৩. কারণ যখন আমাদের শরীর অতিরিক্ত অস্বস্তিতে ভোগে বা উত্তেজিত হয়ে যায়, তখন আমাদের শরীর থেকে হিস্টামিন ক্ষরণ হয়। এই ক্ষরণ বেশি হলে তা আমাদের চামড়ার তলায় জমা হতে থাকে যা থেকে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়ার হার বেড়ে যায় কারণ জন্মের পরে বাচ্চার ত্বক অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়। কি কি কারণে হয় তার কয়েক টা কারণ নিচে বলা হলো; -পোকামাকড়ের কামড় থেকে হতে পারে। অচেনা অজানা পোকা বা মশার কামড়ে যদি কোনো বাচ্চা যদি অ্যালার্জিক হয় তাহলে তার পোকামাকড়ের কামড়ে এই অসুবিধা হতে পারে। -কিছু বিষাক্ত গুল্ম বা গাছ থেকে হতে পারে। তার ফল বা পাতা বা পরাগ রেণুর সংস্পর্শে আসলে এই হাইভস হতে পারে।

-নতুন কোনো খাবার থেকে হতে পারে। আজকাল বাজারজাত অনেক খাবারেই অনেক রাসায়নিক থাকে যার থেকে এই অসুবিধা আসতে পারে। অনেক বাচ্চা অনেক ফলে বা মাছে বা ডিমে অ্যালার্জিক থাকে। তার থেকেও হতে পারে। – বাজার চলতি অনেক প্রসাধনী বা বেবী পাউডার থেকে হতে পারে।

– কোনো শারীরিক সমস্যার জন্যে যদি শিশু প্রথমবার কোনো ওষুধ খায় তার থেকেও এই ত্বকের সমস্যা আসতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে অনেক ওষুধের ক্রিয়ার ক্ষমতা শিশু শরীর সহ্য করতে না পারলে এরকম হয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। – অনেক সময় শিশু জন্মের পর ঠান্ডা লাগায় ভোগে বা জ্বর বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের থেকে শরীর গরম হলে এরকম হয়। ৪. চিকিৎসা অ্যান্টি হিস্টামিন: এর আগে আমরা বলেছি যে শরীরে অতিরিক্ত হিস্টামিন ক্ষরণ হলে তবেই এই সমস্যা দেখা যায়। তাই চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো যার থেকে হচ্ছে তাকে সরিয়ে দিয়ে হিস্টামিন ক্ষরণ কম করা। তার এর জন্যে দরকার অ্যান্টি হিস্টামিন।

অ্যান্টি হিস্টামিন শরীরের হিস্টামিন ক্ষরণ কম করে চামড়ার উপরে জমতে বাধা দেয়। ক্যালামাইন লোশন: এই লোশন ত্বকের উপরের কোনো প্রদাহ জনিত অস্বস্তিতে কমিয়ে আনতে সাহায্য করে এবং অ্যালার্জিক কোনো সমস্যাকে কিছুটা পরিমাণে দূরীভূত করে। এই লোশন এমনকি ত্বকের হালকা কোনো দাগ দূর করতেও সাহায্য করে। হালকা পোশাক: এই সময় শিশুকে হালকা পাতলা সূতির পোশাক পরেন যাতে সে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। মোটা কাপড়ের জামা পরলে তার ঘষায় ত্বকে অ্যালার্জি তৈরি হতে পারে। এছাড়াও ত্বকে হাইভস হলে তার আঘাত খাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। সঠিক স্কিন প্রোডাক্ট : বাচ্চার ত্বক আগেই বলেছি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং নমনীয়। তাই আপনার বাচ্চার গায়ে লাগানোর আগে যেকোনো প্রসাধনী দ্রব্য যাচাই করে নিন তার গুণগত মান সম্পর্কে।

নাহলে এইসব দ্রব্যে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক আপনার শিশুর ত্বকের জন্যে হানিকারক হতে পারে। প্রকৃত যত্ন: সঠিক যত্ন বা ভালোবাসা হয় তো আপনার শিশুর ত্বকের এই সমস্যার সমাধান করবে না কিন্তু হতে পারে আপনার সঠিক ভালোবাসা এবং যত্নে শিশু শান্ত থাকতে পারে যা হিস্টামিন ক্ষরণ কম হতে সাহায্য করবে কারণ আগেই বলেছি শরীর অতিরিক্ত উত্তেজিত হলে এর প্রভাব বাড়ে। ৫. কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন যদি দেখা যায় যে হাইভস দুই চার দিনের বেশি থাকছে বা জ্বর মাথা ঘোরা বা বমি একইভাবে থাকছে বা বাড়ছে সেক্ষেত্রে ছোটখাটো ওষুধের ভরসা ছেড়ে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যান। পরামর্শ নিন এবং আপনার শিশুকে সুস্থ রাখুন।
boldsky

Sharing is caring!

Comments are closed.