প্রতিদিন আপনার শিশুর খাবারে ঘি থাকা কেন জরুরি?

প্রাচীনকাল থেকেই খাবারে ঘি ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে আজকাল আমরা বাবা-মায়েরা এতটাই স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠেছি যে ফ্যাটের ভয়ে বাচ্চাদের এই ঘি খাওয়ানো এক প্রকার বন্ধই করে দিয়েছি।

‘আপনি কি জানেন বাজারে যত ফ্যাট পাওয়া যায় তার মধ্যে ঘি সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং স্বাস্থ্যকর। নির্দিষ্ট পরিমান ঘি একটি শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে আবশ্যক। আর তাই আজ আমরা জানবো, শিশুর সুস্বাস্থ্য গঠনে ঘি কতখানি দরকারি এবং কি পরিমানে ঘি দেয়া উচিত।

যেসব কারনে ঘি বাচ্চার খাবারে দিবেন –

  • ঘি চর্বির জন্য একটি হেলদি উৎসএবং দৈহিক শক্তির জন্য উত্তম উৎস যা শৈশবের সময় দৈহিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজন।
  • শৈশব থেকে সুসাস্থের অধিকারী হবার জন্য ঘি অন্যতম। এতে থাকা প্রাকৃতিক চর্বি এবং এনার্জি সঠিক গ্রোথ এবং ডেভেলপমেন্টে কাজ করে। সাধারনত জন্মের সময়ের ওজন ১ বছরে তিনগুন হয় এটাই স্বাভাবিক। কাজেই ৬ মাসের পর থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবারে একটু ঘি শিশুর সঠিক ওজন ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • যেহেতু শৈশবের সময় গ্রোথ রেট হাই থাকে তাই বাচ্চার শরীর বেশী পরিমানে ক্যালোরি চায়। ১ গ্রাম ঘিতে ৯ ক্যালোরি থাকে। কাজেই খাবারে ঘির পরিমান যোগ করা যেমনি সহজ তেমনি শিশুকে একটিভ রাখার স্বাস্থ্যকর উপায়।
  • প্রথম এক বছর শিশুর মস্তিক গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। সুস্থ পরিবেশ এবং পুষ্টিকর খাবার মস্তিক গঠনে সাহায্য করে। আর এই মস্তিস্কের ৬০% তৈরি হয় ফ্যাট থেকেই। Docosahexaenoic acid (DHA) এক ধরনের হেলদি ফ্যাট যা ব্রেন গ্রোথ এবং ডেভেলপমেন্টের জন্য দায়ি। এবং রিসার্চে পাওয়া গেছে যে বাড়িতে তৈরি করা ঘিতে প্রচুর পরিমানে DHA বিদ্যমান থাকে। তাই খাবারে ঘি যোগ করে শিশুর ব্রেন ডেভেলপমেন্ট প্রসেসকে বুস্ট করবে। শুধু তাই নয় এই ডিএইচএ ব্রেন ডেভেলপমেন্টের সাথে সাথে চোখের জুতি বাড়াতে সাহায্য করে।
  • এছাড়া ঘি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান সমূহের একটি দারুণ উৎস। অতএব আপনার শিশুর খাদ্যে ঘি যোগ করা মানে সংক্রমণ এবং রোগের সূত্রপাত রোধ করা।
  • ঘি ভিটামিনে থাকা দ্রবণীয় চর্বি শোষণ করতে সাহায্য করে। যদি খাবারে ঘি যোগ করা হয় তবে শিশু সহজে ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে শোষণ করতে পারে। এই ভিটামিন পরিপূর্ণ শোষণের ফলে শিশুর হেলদি গ্রোথ ডেভেলপমেন্টের পাশাপাশি ইমিউন সিস্টেমকে বুস্ট করে ঘি।

আপনার সোনামণির কতটুকু ঘি খাওয়া দরকারি ?

  • বাচ্চার বয়স এবং ওজনের উপর নির্ভর করে দৈনন্দিন খাবারের সাথে ঘি দিতে হবে। অনেকে ৬ মাসের আগে থেকেই বাচ্চার খাবারে ঘি দিয়ে থাকেন। তবে এত অল্প বয়সে হজমে বাচ্চাদের একটু সমস্যা হয় তাই কমপক্ষে ৬ মাস বয়স থেকে দেয়া উত্তম। দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার দেয়ার দিন থেকেই একটু একটু ঘি দেয়া শুরু করুন। কেননা এই সময় থেকে বাচ্চা বসা, হামাগুড়ি এবং হাঁটার চেষ্টা করে, কাজেই ক্যালোরি খরচ করার অবস্থায় আসে। তাই প্রথমে খিচুড়ির সাথে কয়েক ফোঁটা দিয়ে অভ্যস্ত করুন এরপর ধীরে ধীরে পরিমান বাড়াতে থাকুন।
    আপনার সোনামণি যদি আন্ডার ওয়েট হয়ে থাকে তবে বেশী পরিমানে দিন। আর যদি ওভার ওয়েট হয়ে থাকে তবে ঘির পরিমাণটা কমিয়ে দিন।
  • সবই তো বলা হল কিন্তু পরিমাণটাই তো বলা হল না! বাড়িতে ৮ মাসের বাচ্চা থাকলে শুরু করুন ১চা চামচ ঘি দিয়ে। এরপর গ্রাজুয়ালি ৩ – ৪ চা চামচ করে ঘি দিন। পরিমান হুট করে বাড়িয়ে দিবেন না। ধীরে ধীরে বাড়ান এবং ওজনের দিকে খেয়াল রাখুন। কেননা ওভারওয়েট হয়ে গেলে ঘি’র পরিমান কমিয়ে দিতে হবে।
  • মাল্টিপাল হেলথ বেনিফিটের জন্য ঘি একটি দারুণ উৎস হতে পারে। বাড়ন্ত শিশুর খাদ্যের সাথে সীমিত পরিমাণ ঘি যোগ করা তার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে অতিরিক্ত কোন কিছুই শুভ ফল বয়ে আনে না এই কথাটি ঘি’র বেলায় শতভাগ প্রযোজ্য।যদি শিশু ওজনে ভারসাম্য আনতে গিয়ে বেশী পরিমানে ঘি খাইয়ে ফেলেন তবে ঘি’র উপকারিতার থেকে অপকারিতাই বেশী হবে।
  • শেষে আরেকটি জিনিস মনে করিয়ে দেই, বাচ্চাদের অবশ্যই দেশি খাঁটি ঘি মানে গরুর দুধ থেকে যে ঘি তৈরি করা হয় তা খাওয়াবেন। বাজারে এখন ঘিয়ের সাবস্টিটিউট হিসেবে বনস্পতি ঘি পাওয়া যায়, যা দামের দিক থেকে গরুর ঘিয়ের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু এই বনস্পতি ঘি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা এটা টাইপ ২ ডায়বেটিস, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

Source:  rupcare

Sharing is caring!

Comments are closed.