অল্পেতেই বিরক্ত শিশু, কৃমির লক্ষণ নয়তো?

শিশুর হঠাৎ ঘ্যানঘ্যানানি, খেতে বিরক্তি। কৃমির লক্ষণ নয়তো? সতর্ক করলেন হোমিওপ্যাথি বিশেষজ্ঞ ডা. শতরূপা চট্টোপাধ্যায়। লিখছেন সোমা মজুমদার।

কয়েকদিন ধরেই ঋজুর বমি হচ্ছে, খিদেও নেই। কিন্তু খাওয়া-দাওয়ার তেমন অনিয়ম হয়নি। শেষে দেখা গেল তিন বছরের শিশুটির কৃমির জন্যই এমন হচ্ছে। শুধু বমি বা খাওয়ায় অনীহা নয়, কৃমির জন্য শিশুর ডায়েরিয়া কিংবা জন্ডিসও হতে পারে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কৃমির কারণেই যে বাচ্চা অসুস্থ হচ্ছে তা চিহ্নিত করতে দেরি হয়ে যায় বলে রোগের ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই কৃমির জন্য বাচ্চার শরীরে কেমন সমস্যা হয় তা বাবা-মায়েদের জানা ও কৃমি হওয়ার লক্ষণ চিনে রাখা উচিত।

কৃমির বংশ

এক ধরনের পরজীবী যা ক্ষুদ্রান্ত্রে থাকে এবং সেখান থেকে খাদ্য গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। এ দেশে সাধারণত টেপ ওয়ার্ম, রাউন্ড ওয়ার্ম, হুক ওয়ার্ম ও পিন ওয়ার্ম বা থ্রেড ওয়ার্ম থেকে ইনফেকশন হয়।

  • টেপ ওয়ার্ম: চ্যাপ্টা ফিতার মতো, ১৫-৩০ ফিট লম্বা হতে পারে।
  • রাউন্ড ওয়ার্ম: কেঁচোর মতো দেখতে। ৩০-৩৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
  • পিন ওয়ার্ম বা থ্রেড ওয়ার্ম: সরু সুতোর মতো দেখতে যা সাধারণত পায়ুছিদ্রের আশেপাশে অবস্থান করে।
  • হুক ওয়ার্ম: মাটি, ধুলো ইত্যাদি থেকে হাতের মাধ্যমে মুখ দিয়ে দেহে প্রবেশ করে।

টেপ ওয়ার্মের লক্ষণ-

  • বমিভাব ও বমি
  • খিদে না পাওয়া অথবা বারবার খেয়েও খিদে পাওয়া
  • ওজন কমা
  • জন্ডিস

থ্রেড ওয়ার্মের লক্ষণ-

  • এই কৃমি রাতে পায়ুছিদ্রের কাছে চুলকানি সৃষ্টি করে। ফলে বাচ্চারা ঘুমাতে পারে না
  • প্রস্রাবে জ্বালা ও যন্ত্রণা হতে পারে।

কীভাবে কচি দেহে ঢোকে কৃমি?

  • কৃমি ও তার ডিমগুলি বাইরের পরিবেশে দু’সপ্তাহ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। বাচ্চারা যখন মাঠে খেলে তখন তাদের হাতের মাধ্যমে শরীরে ঢোকে।
  • পায়ুছিদ্রের চুলকানির ফলে শিশুর হাতে, নখে কৃমির ডিম লেগে তা পুনরায় শরীরে প্রবেশ করে।
  • যিনি বাচ্চাকে খাওয়ান তাঁর হাত থেকেও সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
  • শাকসবজি, ফল ঠিকমতো না ধুয়ে খেলে তা থেকেও হতে পারে।

শরীরে রাউন্ড ওয়ার্মের প্রভাব-

  • ডায়েরিয়া
  • মলের সঙ্গে কৃমির ডিম ও পূর্ণাঙ্গ কৃমিও বের হতে পারে
  • জ্বর ও শুকনো কাশি হয় (সাধারণত রাউন্ড ওয়ার্ম ইনফেকশন ৪-১৬ দিনের মাথায় হয়)

হুক ওয়ার্মের প্রভাব-

  • শুকনো কাশি, শ্বাসনালিতে ইনফেকশন হয়। কৃমি ফুসফুসেও পৌঁছে যেতে পারে
  • অ্যানিমিয়া
  • ক্লান্তিভাব
  • বিভিন্ন ধরনের কৃমির জন্য দাঁত কিড়মিড় করা
  • চর্মরোগ রাতে বিছানায় প্রস্রাব
  • মলে রক্ত দেখা যায়
  • শিশুর বিরক্তি বাড়ে

তবে অবশ্যই কোনও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ও বাচ্চার লক্ষণ অনুযায়ী সঠিক ডোজের ওষুধ খাওয়ানো উচিত।

সতর্কতা-

  • মাটিতে কিছু পড়ে গেলে মুখে দেওয়ার অভ্যাস থাকলে তা থেকে কৃমি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই বাচ্চাদের এই অভ্যাস যাতে তৈরি না হয় সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি।
  • খাওয়ার আগে সবসময় ভাল করে হাত ধুতে হবে।
  • খালি পায়ে মাঠে বা পার্কে খেলা উচিত নয়।
  • ফল ও সবজি খুব ভাল করে ধুয়ে বাচ্চাকে খেতে দিন।
  • বাচ্চার জামাকাপড় ঠিকমতো পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • বিছানা, বালিশ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
  • কাদা বা জলে কৃমির ডিম বেশি পরিমাণে থাকে, তাই শুকনো জায়গায় খেলতে দিন।
  • বিশুদ্ধ জল পান করাতে হবে। ফোটানো জল খাওয়ালে তা ২০ মিনিট ধরে ফোটান।
  • স্কুলে যেতে শুরু করলে তাকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে হবে।

sangbadpratidin

Sharing is caring!

Comments are closed.