গরমে গর্ভবতী মায়ের যত্ন

গর্ভাবস্থায় এমিনিতেই মায়দের শরীরে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে গরম বেশী অনুভূত হয়। তার উপর যদি আসে গরম কাল তাহলে তো আর কথায় নেই। তবে ভয়ের কোন কারণ নেই। গর্ভাবস্থায় গ্রীষ্ম কাল খুব কঠিন বলে মনে হলেও নীচের টিপস গুলো গরমে গর্ভবতী মায়ের যত্ন নিতে সাহায্য করবে।

পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করুন

গরমে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা হয়ে থাকে, তা হল ড্রিহাইড্রেশন বা পানিশূনতা। অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। যার কারণে ড্রিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা দেখা দিয়ে থাকে। তাই এইসময় স্বাভাবিক সময়ের থেকে বেশি পরিমাণে পানি পান করা উচিত। পানি স্বল্পতা হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। গরমের সময় প্রস্রাব হলুদাভ বর্ণের হলে বুঝতে হবে শরীরে পানি স্বল্পতার সৃষ্টি হয়েছে। অন্য কোনো অসুখ বিশেষ করে হেপাটাইটিস বা জন্ডিসের কোনো উপসর্গ না থাকলে প্রস্রাবের হলুদাভ রঙ থেকেই শরীরের পানি স্বল্পতা সম্পর্কে ধারণা করা যায়। প্রস্রাব হলুদাভ রঙের হলে সাথে সাথে প্রচুর পানি পান করতে হবে। যতক্ষণ না প্রস্রাবের রঙ স্বাভাবিক হবে ততক্ষণ এই পানি পান চালিয়ে যেতে হবে। শরীর বেশি অসুস্থ হলে স্যালাইন পানি পান করা ভালো।

পানি ছাড়াও ডাব, জুস, লাচ্ছি, লেবুপানি, দই প্রভৃতি খেতে পারেন। এতে শরীর আর্দ্র থাকবে।

রোদ থেকে দুরে থাকুন

এ সময় সরাসরি সূর্যালোকে বেশী সময় না থাকাই ভাল । যদি সূর্যালোকে থাকতেই হয় তবে সানস্ক্রিন লোশন এবং সানগ্লাস ব্যবহার করা প্রয়োজন । তা না হলে ছাতা এবং টুপি ব্যবহার করা যেতে পারে মাথাকে সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা করার জন্য ।

বিশেষত সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২টায় ঘর থেকে বের না হলে ভাল কারন এই সময় সব চেয়ে বেশী গরম থাকে । যতক্ষণ বাড়ির বাইরে থাকবেন তখন খেয়াল রাখবেন যাতে বেশি সময় ছায়ায় থাকা যায়। একটা পানির  স্প্রে বোতল সাথে রাখুন। বেশী গরম লাগলে মাঝে মাঝে শরীরে হাল্কা পানি স্প্রে করে নিন।

বিশ্রাম নিন

গরমের সময় শরীর খুব তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়ে বলে বেশি বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। ঘুম যাতে পর্যাপ্ত হয় সেদিকেও খেয়াল রাখুন। অধিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকুন। রান্না বান্নার কাজ থেকে যতটা সম্ভব দুরে থাকার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে অন্য কারো সাহায্যও নিন। ঘরের কাজকর্ম যদি সারতেই হয় তাহলে তা ভোরের দিকে সেরে ফেলার চেষ্টা করুন। এই সময়টাতে তুলনামূলকভাবে তাপমাত্রা কম থাকে।

আরামদায়ক পোশাক পড়ুন

এই সময় আরামদায়ক, হালকা এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করা প্রয়োজন। তা শরীরে বাতাস চলাচলে সহায়তা করবে । আর এই সময় সুতি কাপড় পরিধান করলে তা উপকারী হবে । কারন সুতি কাপড় তাপ শোষণ করে না । কৃত্রিম কাপড় যেমন পলিস্টার এবং সিনথেটিক কাপড় তাপ শোষণ করে বলে তা পরিহার করাই ভাল । বেশি জাঁকজমক পোষাক শরীরে বেশি উত্তাপ তৈরি করে। তাই হালকা ঢিলে ঢালা পোষাকই আরামদায়ক। ফ্যাশন করুন হালকা পোষাকে।

নিয়মিত গোসল করুন

গরমকালে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে বেশী থাকে । তাই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রতিদিন গোসল করা প্রয়োজন । সুযোগ থাকলে অল্প সময় নিয়ে একাধিকবার গোসল করতে পারেন। বিশেষ করে, ঘুমানোর আগে গোসল করে নিলে শরীরের তাপমাত্রা কম থাকবে।

হালকা ব্যায়াম করা

এই সময় গর্ভবতী মেয়েরা যদি হালকা ব্যায়াম করে তবে তা তাদের শরীরের জন্য উপকারী । তবে অবশ্যই কি ধরনের ব্যায়াম করতে হবে তা আগে ডাক্তারের কাছে থেকে জেনে নিতে হবে । সাঁতার কাটা খুবই উপকারী কারণ এতে শরীরে রক্ত এবং তরল প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। যদি সাঁতার না পারেন তবে সুইমিং পুলে নেমে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।এতে শরীর ঠাণ্ডাও থাকবে ব্যায়ামও হবে।

অল্প করে বেশী বার খাওয়া

এই সময় একবারে বেশি করে না খেয়ে অল্প অল্প করে একটু পর পর খেলে তা গর্ভবতী মায়ের জন্য বেশী উপকারী । এতে মায়ের বিপাক প্রক্রিয়ার উপর বেশী চাপ না পড়ায় তার অভ্যন্তরীন পরিপাক ক্রিয়া সহজেই কাজ করতে পারে । কিন্তু যদি একবারে বেশী পরিমানে খাওয়া হয় তবে তার বিপাক ক্রিয়াকে অনেক চাপ প্রয়োগ করে কাজ করতে হয় এবং এতে শরীরে অধিক পরিমানে তাপ উৎপাদিত হয় । তাই স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য এক সাথে অধিক পরিমানে খাওয়া থেকে বিরত থাকলে তা উপকারী হবে । উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবারের পরিবর্তে অল্প অল্প খান।

প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলযুক্ত খাবার গ্রহন 

এই সময় ক্যালসিয়াম,আয়রন, প্রোটিন এবং আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করা খুবই দরকার । আর এগুলো পাওয়া যেতে পারে ফলমূল, শাকসবজি ,ডাল,ডিম ,সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি থেকে ।

গরমের দিনে চর্বিযুক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো। চর্বিজাতীয় খাবারে শরীর আরও উত্তাপ লাভ করবে। ঘাম ও অস্বস্তি দুই-ই বাড়বে। চর্বির সঙ্গে অতিমাত্রায় চিনিযুক্ত খাবারও এড়িয়ে চলা স্বস্তিদায়ক। এ সময় নিয়মিত খাবারের তালিকায় যোগ করতে হবে ফলমূল ও শাকসবজি।

ক্যাফেইন জাতীয় খাবার পরিহার করা

সাধারনত ক্যাফেইন জাতীয় খাবার রক্তচাপ বৃদ্ধি করে এবং শরীরের মূল তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দেয় । আবার কারও কারও ক্ষেত্রে ক্যাফেইন এর জন্য বিরক্তিভাব বাড়তে পারে, উদ্বিগ্নতা জন্মাতে পারে, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হতে পারে,অথবা ঘুমের সমস্যা হতে পারে । তাই গর্ভকালীন সময়ে ক্যাফেইন জাতীয় খাবার গ্রহন করা থেকে বিরত থাকলে তা গর্ভবতী মায়ের জন্য উপকারী । ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যেমন চা,কফি কিভাবে গর্ভের সন্তানের উপর প্রভাব বিস্তার করে তা জানার জন্য এখনও গবেষণা চলছে । তবে কোন কোন বিজ্ঞানীর মতে ক্যাফেইন এর জন্য অপরিপক্ক শিশু অথবা স্বাভাবিক এর চাইতে ছোট শিশু অথবা জন্মগত ত্রুটি নিয়ে শিশু জন্মাতে পারে । তাই কেউ যদি এই সময় ক্যাফেইন জাতীয় খাবার গ্রহন করতেও চায় তবে তা খুব অল্প পরিমানে করা উচিত অথবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহন করা উচিত

বাইরের খাবার পরিহার করুন

গরমে আর ক্লান্তিতে বাইরের খোলা খাবার ও পানীয় গ্রহণের হার বেড়ে যায়। তার ওপর গরমে সহজেই খাদ্যদ্রব্য দূষিত হয়। বাড়ে মাছি ও পোকামাকড়ের বিস্তার, যা রোগবালাই ছড়াতে সাহায্য করে। এসবের ফলে বাড়ে পানি ও খাবারবাহিত রোগের প্রকোপ। এর মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো জন্ডিস। জন্ডিস থেকে বাঁচতে, বিশেষ করে রাস্তার খোলা খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।

আরামদায়ক এবং ঠাণ্ডা পরিবেশে ঘুমানোর চেষ্টা করুন

আপনার শোওয়ার ঘর যাতে ঠাণ্ডা, আরামদায়ক এবং বাতাস চলাচলের ব্যাবস্থা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। বাম পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। এটা শরীরের ডান পাশে থাকা শিরায় চাপ কম পরে যা শরীরের নিম্নাংশ থেকে হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহ করে। বিছানার চাদর যাতে সুতির কাপড়ের তৈরি হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এতে ঘুমানোর সময় বেশী গরম লাগবেনা।

গর্ভাবস্থায় গরমে কিছু সাধারণ সমস্যা ও প্রতিকার

শরীরে পানি আসা বা ইডেমা

অতিরিক্ত গরমে শরীরে পানি আসতে পারে এবং আরও বেশী ফুলে যেতে পারে।তাই যখন বিশ্রাম নেবেন বা শুয়ে থাকবেন তখন পায়ের নীচে বালিশ বা আর কিছু দিয়ে পা উপরের দিকে তুলে রাখুন। এতে যেমন আপনার রিলাক্স হবে তেমনি এতে শরীরে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ হবেনা। সবচাইতে ভালো হয় যদি শুয়ে থাকা অবস্থায় পা আপনার হার্টের চাইতে উপরে রাখা যায়। তবে যেটা আপনার জন্য আরামদায়ক সেটাই করুন। অতিরিক্ত লবন শরীরে পানি ধরে রাখে। তাই খাবারে অতিরিক্ত লবন পরিহার করুন। সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন প্যাকেটজাত খাবার না খাওয়ার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত সোডিয়াম কমানোর আরেকটি উপায় হোল পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, যেমন- কলা, অ্যাপ্রিকট, কমলা, মিষ্টি আলু, বিট ইত্যাদি।

Source: fairy land

Sharing is caring!

Comments are closed.