শিশুর চুষনি বা প্যাসিফায়ারের ব্যাবহার এবং যত্ন নেয়া
গবেষণায় দেখা গেছে যে বুকের দুধ খাওয়ানোর আগে চুষনি ব্যবহার করলে দুধ খাওয়ার সময় কম লাগে। এটা মনে করা হয় যে চুষনি এবং স্তনের ক্ষেত্রে বাচ্চার চোষণ পদ্ধতি ভিন্ন। এতে করে বুকের দুধ সরবরাহে নেতিবাচক প্রভাব তৈরী করতে পারে। বয়স্ক বাচ্চারা চুষনি এবং স্তনের পার্থক্য সনাক্ত করতে পারে। যদি আপনি চুষনি ব্যবহারে মনস্থির করেন তাহলে আমরা সুপারিশ করবো বুকের দুধ খাওয়ানো পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। চুষনি ব্যাবহারের আগে বাচ্চাকে শান্ত করার অন্যান্য কৌশল ব্যাবহার করতে পারেন- যেমন দুধ খাওয়ানো, বুকে নিয়ে আদর করা, হাত দিতে মৃদু চাপড়ে দেয়া, দোল খাওয়ানো, কাপড় দিয়ে জড়িয়ে ধরা, শিশু পরিষ্কার আছে কিনা তা দেখে নেয়া এবং আরামদায়ক উষ্ণতা দেয়া।
বুকের দুধ খাওয়ানো অভ্যস্ত করার সময় চুষনি বা প্যাসিফাইয়ার দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়না-
এটা গুরুত্বপূর্ণ যে শিশু প্রথমে সঠিকভাবে স্তন্যপান করতে শিখবে। বুকের দুধ চোষা এবং চুষনি চোষার মধ্যে পার্থক্য আছে। তাই চুষনির ব্যাবহার বুকের দুধ পানে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। চুষনি ব্যাবহার করার কারণে বাচ্চার স্তন্যপানের জন্য প্রস্তুতির লক্ষণগুলো যেমন- ঠোট বা আঙ্গুল চোষা ইত্যাদি বোঝা মায়েদের জন্য কঠিন হতে পারে। চুষনির ব্যাবহারের সাথে নিচের বিষয়গুলোর সম্পর্ক আছে-
- চুষনি দিলে বাচ্চা চুষনি এবং মায়ের স্তন এর বোটার মধ্যে দ্বিধা দ্বন্দ্বে পরে যায়। মায়ের স্তন থেকে দুধ খেতে বাচ্চার একটু বেশি চুষতে হয় না হলে দাঁত ও মাড়ির গঠন ঠিক মত হয় না। কিন্তু বাচ্চাকে চুষনি দিলে বাচ্চা এটার উপরই নির্ভর হয়ে পরে যার কারণে বাচ্চা পরে স্তন্যপান করতে চায় না। সুতরাং পুষ্টি রয়ে যায় অপূর্ণ।
- ৬ মাস থেকে ২ বছর এর মধ্যে বাচ্চাদের দাঁত উঠে যায়। কিন্তু এই সময় চুষনির ব্যাবহার বাচ্চার দাঁতে উঠার সময় যেমন বাড়িয়ে দেয় ঠিক তেমনি দাঁত এর আকার ও গঠনকে করে ফেলে ত্রুটিপূর্ণ।
- একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে বাচ্চারা চুষনিতে অভ্যস্ত তাদের কানের ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অন্য বাচ্চাদের থেকে প্রায় দ্বিগুণ।
- চুষনি ব্যাবহার করা বাচ্চারা কম সময় ধরে বুকের দুধ খায়।
- নবজাতকেদের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম ওজন লাভ।
- যে বাচ্চারা চুষনিতে অভ্যস্ত তাদের পেটে গ্যাস যেমন বেশি তৈরি হয় ঠিক তেমনি কমে যায় বাচ্চার খাবারের রুচি ।
স্তন্যপান শিশুর মুখের নড়াচড়া, চোয়াল এবং কথা বলার উন্নতি সাধনে সবচেয়ে ভাল কাজ করে এবং অর্থডন্টিক ও কথা বলার সমস্যা দুর করে। যে সব শিশুরা অনেক সময় ধরে চুষনি ব্যাবহার করে তাদের এসব ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বাচ্চারা সব সময় মুখে চুষনি রাখতে চায় না, মুখ থেকে বের করে বিছানায় অথবা মেঝেতে রাখে আবার মুখে দেয়। যার কারণে এই চুষনি দিয়েই বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত করে ফেলতে পারে।
আপনি যদি চুষনি ব্যাবহার করতে চান
যদি নিতান্তই আপনি বাচ্চাকে চুষনি দিতে চান তবে নিম্নের বিষয়গুলো পালন করার চেষ্টা করবেন।
- শেষবার কতক্ষণ আগে বুকের দুধ খাইয়েছিলেন তা বিবেচনা না করে চুষনি দেয়ার আগে প্রথমে একবার স্তন্যপান করান।
- চুষনি দেয়ার আগে স্তন্যপানে অভ্যস্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ( স্তন্যপান শুরু করার চার থেকে ছয় সপ্তাহ)
- শিশু ঘুমিয়ে পড়ার পড় চুষনি মুখ থেকে বের করে নিন।
- চুষনি টি পরিষ্কার রাখুন এবং ক্ষয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখলে পাল্টে ফেলুন।
- পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিন। বয়স্ক কেউ যেন ভুলেও বাচ্চার চুষনি মুখে না দেয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। এতে জীবাণু ও প্রদাহের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
- ভালো কোম্পানির তৈরি ভালো চুষনি ব্যাবহার করুন। অনেক কোম্পানি তাদের চুষনিতে অর্থডন্টিক নিপল এবং মায়ের স্তনের মত বলে দাবী করে। এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
কচুষনি নিয়ে কি করনীয় এবং কি নয়
- দুধের বিকল্প হওয়া উচিত নয়।
- একটি চুষ নি কেবল একটি শিশুর মুখেই দেয়া উচিত।
- ব্যাবহারের পূর্বে জীবাণুমুক্ত করে নেয়া উচিত।
- কখনোই মিষ্টি স্বাদযুক্ত করা কিংবা খাবার অথবা স্বাদ গন্ধযুক্ত করার মসলায় চুবানো উচিত নয়।
- কখনোই শিশুর গলায় বাঁধা উচিত নয়।
- শিশুর মুখে ঠিকমত লাগা উচিত।
- ফাটল কিংবা ক্ষয়ে গেলে পাল্টানো উচিত।
- প্রয়োজনমত নিয়মিত পাল্টানো উচিত।
চুষনির যত্ন নেয়া
- সবসময় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা মেনে চলা উচিত।
- সকল শিশুর জন্যই ব্যাবহারের পূর্বে চুষনি জীবাণুমুক্ত করে নেয়া উচিত। জীবাণু ধ্বংস করার জন্য পানিতে চুষনি ৫ মিনিট ফোটান। প্রতিদিন এ কাজটা করুন।
- চুষনি টিকে বাতাসে শুকান এবং একটি পরিষ্কার শক্ত করে বন্ধ করা পাত্রে রেখে দিন।
- যদি আপনার শিশুর প্রদাহজনিত রোগ কিংবা অন্য কোনও সংক্রামক রোগ থাকে তবে চুষনি ছাড়িয়ে দেয়া উচিত এবং চিকিৎসা করতে হবে ।
বিদেশে প্যাসিফায়ারের প্রচলন অনেক বেশি। প্যাসিফায়ারে SIDS (Sudden Infant Death Syndrome বা আচমকা শিশু মৃত্যু)কমে আসে এমন ধারণাও প্রচলিত। আজকাল অবশ্য আমাদের দেশীয় বেবিস্টোরগুলোতেও প্যাসিফায়ারের ছড়াছড়ি। অনেক বাবা-মা প্যাসিফায়ারের ব্যবহার শুরু করেন শিশুদের বুড়ো আঙুল চোষা বন্ধ করতে। প্যাসিফায়ার শিশুদের নিশ্চিন্তেও রাখে বটে। তারপরও উপরের অসুবিধাগুলোর কথা বিবেচনা করে ব্যবহার যতটা সম্ভব কমিয়ে দিন। আপনার শিশু ক্রমশ প্যাসিফায়ারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে, কাজেই ব্যবহার যতটা সম্ভব কম করলে তার উপকারই হবে।
Source: fairy land