গর্ভাবস্থার পরবর্তী ৪০ দিনের প্রাসঙ্গিকতা

৯ মাসের গর্ভাবস্থা আর এর ঠিক পরপরই ৪০ দিনের বিশ্রাম, আর এইটাই একজন মহিলার জীবনের সবথেকে কঠিন সময়। এখন বেশিরভাগ মানুষই, প্রসবের পরবর্তী প্রথম ৪০ দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন, ফলত পরবর্তী জীবনে তাদের এর নিদারূণ প্রভাবের সম্মুখীন হতে হয়। আলাদা আলাদা দেশে এর রীতি, আলাদা আলাদা রকম হতে পারে, তবে মা ও শিশুর মধ্যে বন্ধন গড়ে তুলতে এটি সুবর্ণ সময়কাল। এর পরম এবং বিজ্ঞানসম্মত কারণ হল, এটি এমন একটি সময় যখন কোন মানুষের শরীর সর্বাধিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, বিশেষত এটি যদি প্রথম সন্তান হয়ে থাকে। সমগ্র ইন্টারনাল সিস্টেম বিপর্যস্ত হয়ে পরে এবং জরায়ু আকারে প্রায় ৮-১০ গুণ বৃদ্ধি পায়। অতঃপর, আভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি নিজের আকার ফিরে পেতে ও শরীরের সার্বিক আরোগ্যলাভ করতে, অন্তত এই ৪০ দিন বিশ্রাম নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কেউ কেউ হয়তো ভাবছেন, ৪০ দিন? এতোটাই লম্বা সময়? এতোতা সময় যাবৎ

বাধানিষেধ আর এইসব। কিন্তু প্রিয় পাঠক, আপমাকে এগুলি অন্য কারোর জন্য নয় নিজের জন্য মানতে হবে। অনেকে তো আরো বেশি সময় নেয় সম্পূর্ণ সুস্থ হতে, কিন্তু এতা পুরোতাই নির্ভর করছে বিশ্রামের ওপর। কেবলমাত্র, নিজেদের দেখাশুনার প্রতি উদাসীন হওয়ার কারণে, পরবর্তীকালে, বাত, জরায়ুর সমস্যা, পিঠ ও কোমরে সমস্যা এমন আরো অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু ততদিনে ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে করতে অনেক দেরী হয়ে যায়। এটাকে, একটা বন্দিদশা ভাবার চেয়ে, নিজের সাথে এবং নিজের নবজাতকটির সাথে এই সময়টা উপভোগ করুন।

আপনি সম্প্রতি একজন স্তনদায়ী মা হয়েছেন এবং স্তনদুগ্ধ পান করানো একটি কঠিনতম কাজ। প্রসব স্বাভাবিক ভাবে হয়ে থাকুক বা সি-সেকশন করে হয়ে থাকুক, শুধু সেলাই এর ব্যাথা বাদে, আপনার আভ্যন্তরীণ শরীর সেই একই শারীরিক ও মানিসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যায়। তাই যতটো পারা যায় ততোটাই নিজের স্বাস্থ্য পুনরূদ্ধার করার চেষ্টা করুন।

আগে মনে করা হতো, এই ৪০ দিন আপনাকে আপনার শক্তি ও অনাক্রমতা ফিরে পেতে সাহায্য করে। এই কারণে, এইসময়ে আপনার মা, শাশুড়িমা বা ধাইমায়েরা আপনাকে ফের আপনার জীবনপথে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে থাকেন। আপনার শরীরকে আগের মতো সেরে উঠতে হবে, ফের সক্রিয় হতে হবে ও হারিয়ে যাওয়া শক্তি ফিরে পেতে হবে। একই সাথে আপনার শিশুরও এইসময় বাইরের জগতের সাথে সমন্বয় তৈরী করার প্রয়োজন, ওর অনুভব করা প্রয়োজন আপনার উষ্ণতাকে ও পরিচিত হওয়ার প্রয়োজন পরিবারের সকলের সাথে ।

যে পরিবর্তনগুলির সাথে আপনাকে এইসময়ে যুজতে হয়ঃ

আপনার জরায়ুকে আগের আকার এবং আকৃতি ফিরে পেতে ন্যূনতম 6 সপ্তাহের প্রয়োজন। আপনি হয়তো নির্দিষ্ট কিছু সংকোচন অনুভব করতে পারেন, বিশেষত যখন আপনি দুধ খাওয়াতে থাকবেন।

কিছু পেশী গর্ভাবস্থায় সক্ত হয়ে পরে এবং ধীরে ধীরে সেগুলি নরম হতে থাকে। এটি আসলে, প্রসবকালিন যে অসহ্য যন্ত্রণার আপনাকে সহ্য করতে হয় তার জন্য হয়ে থাকে।

স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ বেশি হয়ে থাকে কখনো তা কারো কারো ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ মারাত্মক পর্যায়ে চলে যায়। সি- সেকশনের ক্ষেত্রেও, যদিও তেমন রক্তক্ষরণ হয় না, তবুও একটি ভাল পরিমান রক্তের হানি হয়ে থাকে। তাই শরীরকে রক্তের ক্ষয়ও পূরণ করতে হয়।

বুকে দুধ জমে যাওয়ার কারণে, আপনার হয়তো স্তনেদুটি ভারী মনে হতে পারে। এক্ষেত্রে, আপনাকে গরম টাওয়েলর সেঁক দিয়ে স্তনদুটি ম্যাসাজ করতে হবে, যাতে স্তন নরম থাকে ও এতে দুধ জমে ডেলা না পাকিয়ে যায়।

  • আপনাকে পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিতে হবে।
  • সঠিক ও সুষম খাদ্য খেতে হবে।
  • ঘরের কাজে সাহায্য করার জন্য আপনার একজন সাহায্যকারীর প্রয়োজন।

যারা নতুন মা হতে চলেছেন, তাদের এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে নিজেদেরকে তৈরী করা উচিৎ। এটি একটি সবচেয়ে কঠিন কাজ যা আপনি নিচ্ছেন। তাই এই সময়টা উপভোগ করুন ও এই ৪০ দিনের গুরুত্বটাকে বুঝুন।

Source:boldsky

Sharing is caring!

Comments are closed.