শিশুর বেড়ে ওঠা । তৃতীয় মাস
আপনার শিশু আপনার সাথে শান্ত থাকবে এবং চোখে চোখ রাখবে বা রুমে আপনাকে খুঁজে বেড়াবে। যখনই খুঁজে পাবে সে হয়তো হেঁসে উঠবে বা আনন্দে হাত পা ছুড়তে থাকবে।এ মাসে আপনার শিশুর মস্তিষ্কের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হচ্ছে যার ফলে তার আচরণগত অনেক পরিবর্তন আসতে থাকবে।
এখন থেকেই আপনার বাচ্চার ঘুমের স্বাভাবিক নিয়ম শুরু হতে পারে। বেশীরভাগ বাচ্চাই এ সময় রাতে একটানা ছয় ঘণ্টার মতো ঘুমায়। মাঝে মাঝে হয়তো খাওয়ার জন্য জাগতে পারে। কিছু কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে ছয় মাস বা তার পর থেকে রাতে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে উঠে। দিনে সাধারণত দুবার ঘুমানো এখন স্বাভাবিক।
এ মাসে শিশুর শারিরীক পরিবর্তনঃ
আপনার শিশু এখন হাত পা ছুড়তে পারবে। যেহেতু তার কোমর ও হাঁটুর জয়েন্টগুলো আরও নমনীয় হয়ে উঠছে তাই তার লাথি এখন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। সে এখন তার দু হাত একসাথে করতে পারবে এবং হাতের আঙ্গুল মুষ্টি করা ও খুলতে পারবে। প্রতি সপ্তাহেই আপনার শিশুর ঘাড়ের পেশী আস্তে আস্তে মজবুত হচ্ছে। তাই এখন থেকেই তাকে অন্তত কিছু সময় এর জন্য উপুর করে শুইয়ে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা তার পেশী ও শারীরিক বিকাশে সাহায্য করে। সে হয়তো খুব বেশী সময় মাথা উপরে ধরে রাখতে পারবেনা তাই এ সময় বাচ্চাকে চোখের আড়াল করবেন না।
আপনার শিশুর নমনীয়তা এ সময় বাড়তে থাকবে। সে এখন হাতের আঙুল মুঠো করতে আর খুলতে, কিংবা হাততালি দিতে আনন্দ পাবে। আপনার শিশুর মজা পাওয়ার ক্ষমতাও বাড়ছে। কাতুকুতু দিলে বা পেটে শব্দ করে চুমু খেলে সে হাসবে।
শুধুমাত্র খেলাও বাচ্চার মস্তিষ্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তার মস্তিষ্ক যতো গড়ে উঠবে, তত তার কৌতূহলও বাড়বে। সে হয়তো একটা ছোট খেলনা নিয়ে খেলবে যেটা সে ধরতে আর ঝাঁকাতে পারে। সে রং, আকার ও মাপ সম্বন্ধেও শিখবে। খেলনা থেকে যে শব্দ হয় তার থেকে আর সেটা নরম কিম্বা শক্ত সেই অনুভূতি থেকেও সে শিখবে।
আপনি নানা রকম মজার মুখ করলে বাচ্চা আস্তে বা খিলখিল করে হাসতে শুরু করবে এবং ছেলেমানুষি কাণ্ডকারখানায় খুব আনন্দ পাবে। নানা রকম শব্দ শুনতেও ওর মজা লাগবে। জিভ দিয়ে টক টক আওয়াজ করুন, শিস দিন বা জন্তুজানোয়ারের ডাক ডাকুন। সে এটা পছন্দ করবে।
মনস্তাত্বিক পরিবর্তনঃ
- খুশি, আনন্দ ও ব্যাথার প্রাথমিক আবেগের সাথে পরিচয় হয়।
- মুখে হাসির রেখা স্পষ্ট হয়।
- দুলুনি বা ঝুলুনি উপভোগ করে।
সামাজিক পরিবর্তনঃ
- অন্যদের মুখভঙ্গী বোঝার চেষ্টা করে।
- হাশি মুখ দেখে স্বস্তি বোধ করে।
শিশুর টীকাঃ
২ মাস বয়স থেকেই সাধারনত শিশুর টীকা দেয়া শুরু হয়। সময়মত প্রয়োজনীয় সব টিকা দেবার ব্যপারে সচেতন থাকবেন। অন্যান্য ব্যাপারে স্বাস্থ্যখাতে অনেক দুর্বলতা থাকলেও, আমাদের দেশে সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র বাচ্চাদের টিকাদানের জন্য যথেষ্ট ভালো ও নির্ভরযোগ্য ব্যাবস্থা রয়েছে।
শিশুর টিকা কখন দিবেন, কোথায় দিবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন।
কিভাবে এ মাসে আপনার শিশুর বিকাশে সাহায্য করবেনঃ
গবেষণায় দেখা গেছে যেসব শিশুর বাবা মা তার সাথে প্রচুর কথা বলে সেসব শিশুর IQ এবং vocabulary অন্য শিশুদের তুলনায় অনেক ভাল থাকে। তাই শিশুর সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলুন বিভিন্ন বস্তুর নাম বলুন। সে এসব শব্দ এখন উচ্চারণ করতে না পারলেও সবকিছুই তার মস্তিশকে সংরক্ষিত হচ্ছে।
তার চোখ ও হাতের সমন্বয় বাড়ানোর জন্য একটি খেলনা বাড়িয়ে ধরে দেখুন সে তা ধরতে চেষ্টা করছে কিনা। শিশুরা সাধারণ ভাবেই স্পর্শ পেতে ভালবাসে। এটি তাদের বৃদ্ধি এবং বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিশুর ত্বক থেকে চামড়ার সংস্পর্শে শুধুমাত্র আপনার সাথে তার বন্ধনকেই গাড় করবেনা এটা যখন সে বিরক্ত হয়, সে অস্বস্তি বোধ করে তখন তাকে সান্ত্বনাও দেয়।
জিনিস নিয়ে খেলা আপনার শিশুর জন্য মজার ব্যাপার, আর এটা তার মানসিক ও শারীরিক দক্ষতা গড়ে তুলতে তাকে সাহায্য করে৷ কীভাবে জিনিস হাতে ধরতে হয় সেটা শিখে নেওয়া আপনার শিশুর কাছে একটা পুরো নতুন জগতের দরজা খুলে দেয়। এছাড়াও এটা আপনার শিশুর নিজে কাজ করার, যেমন খাওয়া, দাঁত মাজা, পড়া, লেখা এবং নানা কাজকর্ম করার প্রথম পদক্ষেপ৷
জন্মের সময় থেকেই আপনার শিশুর আঁকড়ে ধরার একটা সহজাত ক্ষমতা থাকে৷ প্রথমে মজাদার জিনিস দেখেই সে খুশী হয়, তবে ক্রমশ সে ঐগুলি হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরতে চাইবে৷ প্রায় ৩ মাস বয়স থেকে সে এই কৌশল ব্যবহার করতে শুরু করবে৷ আপনার শিশুকে এই কৌশলটা শেখানোর জন্য রঙবেরঙের জিনিসপত্র দিলে ভাল হয়। ওর নাগালের মধ্যে জিনিস দোলাতে থাকু। দেখুন ও কীভাবে সেটা আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করে!
বাচ্চাকে আলতো মাসাজ করতে পারেন। হাতে সামান্য বেবি অয়েল নিয়ে ঘষে তা হালকা গরম করে নিন। এরপর বাচ্চার চোখে চোখ রেখে তার সাথে কথা বলতে বলতে বা মৃদু স্বরে গান করতে করতে মাসাজ করুন। যদি সে উপভোগ না করে তবে মাসাজ থামিয়ে দিন। আপনার আলতো স্পর্শই তার জন্য যথেষ্ট।
এখন যেহেতু সে আস্তে আস্তে ধরতে শিখছে তাই হালকা এবং ধরতে সুবিধা এমন কিছু তাকে ধরতে দিন।যেসব জিনিস ও খেলনা শিশুর পক্ষে মুখে দেওয়া নিরাপদ তেমন জিনিস বেছে নিন৷ ঐগুলি পরিষ্কার করা সহজ হওয়া উচিত এবং ঐগুলিতে ধারালো কোণা, সুতো বা ছোট টুকরো থাকা উচিত না৷ সে হয়তো একটা হাত দিয়ে জিনিস ধরে থাকতে পছন্দ করবে। তাই বলে সে বামহাতি না ডানহাতি সেটা আপনি এখনই বুঝতে পারবেন না।
মাইলস্টোন- তৃতীয় মাস
- পেটের উপর শুয়ে থাকলে বুক ও মাথা উপরে তুলতে পারে।
- শুয়ে থাকা অবস্থায় হাত পা ছুড়তে পারে।
- হাতের মুঠি খোলা বাঁধা করতে পারে।
- দাঁর করালে পায়ের উপর ভর দিতে পারে
- মাত মুখে দিতে পারে।
- খেলনা বা অন্য কিছু হাত দিয়ে ধরতে চেষ্টা করে বা হাতে ধরলে ঝাঁকাতে চেষ্টা করে।
- মানুসের চেহারার দিকে মনোযোগ দেবে।
- চোখ দিয়ে জিনিস অনুসরণ করবে।
- বাবা মায়ের গলা শুনলে হাসার চেষ্টা করবে।
- গলার আওয়াজ অনুকরন করার চেষ্টা করবে।
বিপদ চিহ্নঃ
- চলন্ত কিছুর দিকে দৃস্টি না দেয়া।
- তীব্র আলো বা শব্দে প্রতিক্রিয়া না দেখানো।
- হাত মুখের কাছে আনতে না পারা।
- পেটের উপর শুয়ে থাকা অবস্থায় মাথা উপরে তুলে ধরে না পারা।
- কিছু হাতে মুঠি করে ধরতে না পারা।
- কারও দিকে তাকিয়ে না হাঁসা।
- দাঁর করিয়ে দিলে পায়ে ভর দিতে না পারা।
- সবসময় চোখ ট্যাঁরা করে রাখা ( মাঝে মাঝে চোখ ট্যাঁরা করে থাকা এ সময় স্বাভাবিক)
এ সময় কি কি মাইলস্টোন আপনার শিশু অর্জন করতে যাচ্ছে তা জানার সাথে সাথে ভুলে যাবেন না যে এট শুধু মাত্র একটা গাইডলাইন। প্রতিটি শিশুই ইউনিক ( স্বকীয় ) এবং তার বেড়ে ওঠার গতিও ভিন্ন।যে শিশুটি অন্যদের থেকে প্রথমে বসতে শিখেছে সে হয়ত সবার শেষে হামাগুড়ি দিতে শিখবে। অথবা ১৮ মাস বয়সী যে শিশুটি শব্দ ও অঙ্গাভঙ্গির মাধ্যমে এখনো ভাবের আদান প্রদান করছে সে হটাৎ করেই দুই বছর বয়সে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাক্য বলা শুরু করতে পারে।এই টাইমলাইন সিরিজ যেন আপনার কোন রকম দুঃশ্চিন্তার কারন না হয় খেয়াল রাখবেন। প্রতিটি টাইমলাইনকে একটি গাইড হিসেবে ধরে নিতে হবে ।নবজাতক এর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোন আশঙ্কা বা জিজ্ঞাসা থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
Source: Fairy land