শিশুর বেড়ে ওঠা । দ্বিতীয় মাস
একটু পর পর খাওয়ানো আর ন্যাপি পরিষ্কার করা, আদর করা, দোলা দিয়ে ঘুম পাড়ানো, মাসাজ করে দেয়া, গোসল করানো আর নবজাতকের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানই এখন বাবা-মায়ের প্রধান কাজ। বিষয়টি মায়েরদের জন্য একটু ক্লান্তিকর হয়ে যায় অনেক সময়, তাই যথাসম্ভব পরিবারের অন্যদের সাহায্য নিতে কেউ কার্পণ্য করবেন না। এসময় মায়ের নিজের শারীরিক এবং মানসিকভাবে উজ্জিবত এবং সুস্থ থাকার চেষ্টা করা প্রয়োজন।
২ মাস বয়সে শিশুর পরিবর্তন
দুমাস বয়সী বাচ্চার কর্মকাণ্ডে খুব বেশী পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না, এ মাসে আস্তে আস্তে সে রং চিনতে শেখে, রঙের পার্থক্য শিখতে থাকে, এসময় তার মানসিক বিকাশের জন্য, তাকে রঙিন ও এ বয়সের জন্য নিরাপদ খেলনা দিন। যেমন কাপড়ের বই, সেইফ প্লাস্টিক খেলনা কিংবা নরম বল। রঙিন কিছুর দিকে সে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকাতে পারে, কোন শব্দ শুনলে সচকিত হয়ে তাকানো শুরু করবে- বিপুল এই পৃথিবীকে জানার এইতো শুরু।
এসময় সাধারনত বাচ্চারা সজোরে মুঠো বন্ধ করতে পারে, হাতের কাছে কিছু পেলে সজোরে চেপে ধরে, তা হতে পারে আপনার চুলের গোছাও ।তবে মুঠো কিভাবে ছাড়াতে হয় তা শিখতে আরো বেশ কিছুদিন সময় লাগবে আপনার বাবুর, সে পর্যন্ত নিজের চুল সামলে রাখুন।
নবজাতক অবস্থায় সে যেভাবে হাত পা নাড়ত , সেগুলো আস্তে আস্তে আরেকটু পরিণত হতে থাকবে। নিজের হাত বা পায়ের দিকে নিজেই অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ভাববেঃ ‘এগুলো আবার কি নড়ছে’ ?
সকল বাচ্চা এক একজন আলাদা ব্যক্তি, এক একটি বাচ্চার জিনেটিক গঠন এক এক রকম, সুতরাং বাচ্চার ডেভেলপমেন্টের কোন বিষয় সাধারন মাইলস্টোনের সাথে না মিললেও দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ভালো করে বাচ্চার নড়াচড়া , কান্নার কারণ, ঘুম ও খাদ্যাভ্যাস লক্ষ্য করুন। কোন বিষয়ে সমস্যা আছে মনে হলে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন।কোন অসুস্থতা ছাড়াও বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওজন, হাইট ঠিক আছে কিনা এবং সেইসাথে বাচ্চার দৃষ্টি , হার্টবিট, যৌনাঙ্গ ইত্যাদি পরিক্ষা করানোর জন্য মাঝে মাঝে বিশেষজ্ঞরে কাছে যেতে পারেন। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় সবসময় জন্মের সময় থেকে বাচ্চার যেসন হেলথ-রিপোর্ট আছে সব ফাইলিং করেবেন এবং ডাক্তারকে দেখাবেন।
শিশুর টীকা
২ মাস বয়স থেকেই সাধারনত শিশুর টীকা দেয়া শুরু হয়। সময়মত প্রয়োজনীয় সব টিকা দেবার ব্যপারে সচেতন থাকবেন। অন্যান্য ব্যাপারে স্বাস্থ্যখাতে অনেক দুর্বলতা থাকলেও, আমাদের দেশে সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র বাচ্চাদের টিকাদানের জন্য যথেষ্ট ভালো ও নির্ভরযোগ্য ব্যাবস্থা রয়েছে।
কিছু টিকা দেবার পর বাচ্চার জ্বর আসতে পারে, এটি স্বাভাবিক, এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ ও পরিমাপ মতো মতো হয়তো বাচ্চাদের প্যারাসিটামল খাওয়াতে হতে পারে। কারো কারো ডায়রিয়াও হতে পারে। আবার কিছু কিছু বাচ্চার এই উপসর্গগুলো টিকা দেবার পর পর না হয়ে কয়েকদিন পরও হতে পারে। ডাক্তারের পরমর্শ ছাড়া অন্য কোন ধরণের ওষুধ খায়াবেন না। এসময় মায়ের দুধ ছাড়া আর কিছুরই প্রয়োজন হয় না, ক্ষেত্র বিশেষে মায়ের দুধ না পেলে, কিংবা অন্য কোন ইমারজেন্সিতে বয়স অনুযায়ী ভালো ব্র্যান্ডের ফর্মুলা দিতে পারেন।
২ মাস বয়সে শিশুর ঘুম
জন্মের পর থেকে শুরু করে এক মাস অতিক্রম হবার পর, বাচ্চার ঘুমের তেমন কোন বড় পরিবর্তন আসে না হয়তো, বেশ করেকঘন্টা একটানা ঘুমানো এই বয়সী শিশুর কাছ থেকে আশা না করাই ভালো। এরা অল্প সময় ঘুমাবে, এবং ঘন ঘন খাবে, আবার ঘুমিয়ে পড়বে। রাতে কোন কোন বাচ্চা অনেকটুকু সময় ঘুমিয়েও কাটাতে পারে, সেক্ষেত্রে, আপনি হবেন গুটি-কয়েক সৌভাগ্যবান বাবা-মায়ের মধ্যে একজন। এসমইয়ের পর থেকে আস্তে আস্তে জেগে থাকা এবং ঘুম-উভয়টির সময়ই আস্তে আস্তে প্রলম্বিত হত থাকবে। বাচ্চার নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর , কোলে নেয়া না নেয়া, কিংবা নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ানো ইত্যাদি অভ্যাস করানোর আরো বেশ কয়েকটি মাস অপেক্ষা করুন, এই বয়সে বাচ্চাকে তার নিজস্ব চাহিদামত ঘুম, খাওয়ানো এবং মায়ের সান্নিধ্যে রাখুন।
শিশুর কান্না
এসময় কোনো কোনো বাচ্চা তুলনামুলকভাবে একটু বেশী কান্না করতে পারে।চেক-আপ করিয়ে যদি সব ঠিকঠাক পাওয়া যায়, তাহলে , আপনাকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। হয়তো আপনার বাচ্চা ‘কলিক’ । ২০ থেকে ৩০ ভাগ বাচ্চার জন্মের পর থেকে প্রথম কয়েক মাস এই ‘কলিক’ সময়টি যেতে পারে, এসময় বাবা-মায়ের বেশ কষ্ট হলেও, পরবর্তিতে এর কোন প্রভাব থাকে না । কলিকের সময়টি অনেক বাচ্চার প্রথম তিন মাস, কিংবা কারো কারো আরেকটু প্রলম্বিত যেমন ৬ থেকে ৯ মাস পর্যন্তও থাকতে পারে।
কোন বাচ্চা ‘প্রিম্যাচিওর’ হয়ে জন্মালে তার ডেভেলপমেন্ট জন্মতারিখ থেকে শুরু না করে, তার যেসময় জন্মানোর কথা ছিল সেই সময় থেকে হিসাব করা বাঞ্ছনীয় ।
বাচ্চার ঘাড়ের পেশী এখন পুরো শক্ত হয়ে ওঠেনি , তাই সাবধানে কোলে নিন। প্রতিবার খাওয়ানোর পর সোজা করে ধরে, পিঠে হাল্কা চাপড় দিয়ে ঢেঁকুর তুলতে সাহায্য করুন। বাচ্চার সামনে হাশিখুশি থাকুন। অন্যের বিরক্তি কিংবা রাগ জন্মের পর পরই বাচ্চারা বুঝে নিতে শিখে।
পরিশিষ্ট
নিজেকে সামলাতে পারছেন না? অকারনেই রাগ হচ্ছে? নিজেকে বঞ্চিত মনে হচ্ছে? শুধুই কাঁদছেন ? খুব অল্পেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন ? – আপনি যদি নতুন মা হয়ে থাকেন, এবং এরকম কোন সমস্যার মধ্য দিয়ে যান, নিজেকে দোষারোপ করবেন না। বেশীরভাগ নতুন মায়ের এটি হয়ে থাকে। একে ‘বেবি ব্লু’ কিংবা মায়েদের নীল সময় বলা হয়ে থাকে। এ সমস্যা বাচ্চা জন্মের এক-দুই মাসের মধ্যে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায় সাধারণত। তবে , যদি ঠিক না হয় , আপনার এই সমস্যা তার পরও চলতে থাকে, এবং আপনি মনে করতে থাকেন, আপনার কাছে সমস্যা উত্তরনের কোন পথ নেই, তবে আপনি ‘পোস্ট-প্যরটাম ডিপ্রেশান’ এ ভুগছেন। এটি শারিরিক সমস্যার মতোই একটি মানসিক সমস্যা, যেটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য ।
মাইলস্টোন – দ্বিতীয় মাস
- মানুষের দিকে তাকিয়ে হাঁসা শুরু করবে।
- নিজেকে শান্ত করতে পারবে।
- বাবা মায়ের দিকে তাকানর চেষ্টা করবে।
- মুখ দিয়ে শব্দ করতে পারবে।
- শব্দের উৎসের দিকে তাকানোর চেষ্টা করবে।
- মানুসের চেহারার দিকে মনোযোগ দেবে।
- চোখ দিয়ে জিনিস অনুসরণ করবে।
- পেটের উপর শুয়ে থাকলে মাথা উপরে তুলে রাখতে পারবে।
- হাত পা ভালোভাবে নাড়াতে পারবে।
বিপদ চিহ্ন
- চলন্ত কিছুর দিকে দৃস্টি না দেয়া।
- তীব্র আলো বা শব্দে প্রতিক্রিয়া না দেখানো।
- হাত মুখের কাছে আনতে না পারা।
- পেটের উপর শুয়ে থাকা অবস্থায় মাথা উপরে তুলে ধরে না পারা।
এ সময় কি কি মাইলস্টোন আপনার শিশু অর্জন করতে যাচ্ছে তা জানার সাথে সাথে ভুলে যাবেন না যে এট শুধু মাত্র একটা গাইডলাইন। প্রতিটি শিশুই ইউনিক ( স্বকীয় ) এবং তার বেড়ে ওঠার গতিও ভিন্ন।যে শিশুটি অন্যদের থেকে প্রথমে বসতে শিখেছে সে হয়ত সবার শেষে হামাগুড়ি দিতে শিখবে। অথবা ১৮ মাস বয়সী যে শিশুটি শব্দ ও অঙ্গাভঙ্গির মাধ্যমে এখনো ভাবের আদান প্রদান করছে সে হটাৎ করেই দুই বছর বয়সে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাক্য বলা শুরু করতে পারে।এই টাইমলাইন সিরিজ যেন আপনার কোন রকম দুঃশ্চিন্তার কারন না হয় খেয়াল রাখবেন। প্রতিটি টাইমলাইনকে একটি গাইড হিসেবে ধরে নিতে হবে ।নবজাতক এর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোন আশঙ্কা বা জিজ্ঞাসা থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
Source: fairy land