শিশুদের পেটে ব্যথা হলেই আমরা মনে করি ক্রিমি হয়েছে কিংবা ক্ষুধা লেগেছে। অথচ বাচ্চাদেরও যে অ্যাসিডিটি হতে পারে, সেটা আমরা হয়তো চিন্তাও করি না। গ্যাস্ট্রিক, পেপটিক আলসার বা অ্যাসিডিটি—যে নামেই ডাকি না কেন, বাচ্চাদের মধ্যে এটি কিন্তু দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই হার প্রায় ১৭ শতাংশ আর ইউরোপে ৮ শতাংশ। এ পরিসংখ্যানেই বোঝা যাচ্ছে, এই রোগ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বিরল নয়। শিশুদের একটা বড় অংশ এইচ পাইলোরি নামের জীবাণুর প্রভাবে অ্যাসিডিটিতে ভুগলেও বর্তমানে বাচ্চাদের ফাস্ট ফুড খাওয়ার প্রবণতাও এর একটা বড় কারণ। এ ছাড়া স্কুল থেকে বের হলেই বাচ্চারা বায়না ধরে ঝালমুড়ি, ফুচকা, চটপটি ইত্যাদি খাওয়ার। এগুলো থেকেও অনেকে অ্যাসিডিটিতে ভোগে। অ্যাসিডিটির জন্য মানসিক চাপও কিন্তু দায়ী। আজকাল শিশুদের কোনো বিনোদন নেই, আছে কেবল বইয়ের বিশাল বোঝা। স্কুলের পড়া, প্রাইভেট কোচিং আর সব সময় পরীক্ষায় ভালো করার জন্য মা-বাবার তাড়া বাচ্চাদের নিজেদের ওপর বিশ্বাস তো কমছেই, তার ওপর মানসিকভাবে চাপে থাকার কারণে তাদের অ্যাসিডিটিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অ্যাসিডিটি বেশি বেড়ে গেলে তা থেকে পেটে আলসার বা পেপটিক আলসার হতে পারে। তবে আগে থেকে লক্ষণ জানা থাকলে এসব জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
লক্ষণগুলো হলো পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা, ঢেকুর ওঠা, বমি বমি ভাব, ক্ষুধা কমে যাওয়া ইত্যাদি। অনেক বাচ্চা এর কিছুই বুঝতে পারে না, তারা কেবল পেট চেপে ধরে অস্থিরতা কিংবা কান্না করতে থাকে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
বেশ কিছু ওষুধ আছে অ্যাসিডিটি কমানোর। তবে একই ওষুধ সব বয়সের জন্য প্রযোজ্য নয়, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বড়দের গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বাচ্চাদের খাওয়াবেন না।
যেসব শিশুর অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তাদের ফাস্ট ফুড, ঝালমুড়ি, চটপটি, ফুচকা ইত্যাদি খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করুন। অন্যদিকে এইচ পাইলোরি থেকে বাঁচতে বিশুদ্ধ ও পরিষ্কার পানি ও খাবার দিন এবং নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করান। বাচ্চাকে রাস্তার পাশের খাবার খাওয়াবেন না।
শিশুদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় নিয়ম মেনে চললেই রোগটি আর হয় না, ফলে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধেরও প্রয়োজন হয় না। তাই এই রোগ প্রতিরোধে মা-বাবারা যত বেশি সতর্ক হবেন, ততই মঙ্গল।
ডা. আবু সাঈদ
শিশু বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ
সুত্রঃ প্রথম আলো
Sharing is caring!