শিশুদের ওজন কেমন থাকা উচিত? ডা. কমল কলি হোসেন
প্রশ্ন : চাইল্ডহুড ওবেসিটি বা শিশুকালে মুটিয়ে যাওয়া বিষয়টি কী?
উত্তর : শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। শিশুদের প্রতি আমাদের যত্ন নিতে হবে, লক্ষ রাখতে হবে। আমরা যাঁরা স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকি, বিদেশে আমাদের খুব ভালো একটি প্রোগ্রাম আছে, যেটাকে সিএইচডিপি বলি—প্রিভেনশন টাইপ অব প্রোগ্রাম। হয়তো এ দেশে এখনো নেই এটি। তবে আমি আশাবাদী, ভবিষ্যতে হয়তো এই প্রোগ্রাম হবে। যেমন—এক বছরের শিশু অন্তত ছয়বার চিকিৎসকের কাছে যাবে। দুই মাস, চার মাস, ছয় মাস, নয় মাস, এক বছর এ রকম করে। সে সময় ওজন দেখা হবে। ভ্যাকসিনেশন করা হবে।
প্রশ্ন : অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শিশু মানেই মোটা, নাদুসনুদুস হবে। শুকনো বা চিকন বাচ্চা দেখলে সবাই কষ্ট পায়। আসলে একটি শিশুর আদর্শ ওজন কী হওয়া উচিত?
উত্তর : সংস্কৃতিগতভাবে বাঙালি জাতি হিসেবে আমরা শিশুকে খাওয়াতেও পছন্দ করি। নিজেরাও খেতে পছন্দ করি। যার জন্য শিশুটির হয়তো ক্ষুধা নেই, তবুও আমরা খাওয়াতে চাই। এই করে আমরা ওজন বাড়িয়ে ফেলি। স্বাস্থ্যবান শিশু সত্যিই ভালো, যদি সে সুস্থ থাকে। একটা অসুবিধা হলো, শিশুদের যে চর্বি কোষগুলো হয়, সেগুলো বড় হওয়ার পরও থেকে যায়। যখন ভবিষ্যতে শিশুটি বড় হবে, তখন হার্টের ওপর চাপ পড়বে।
প্রশ্ন : শিশুর জন্য কোনো আদর্শ ওজন রয়েছে কি?
উত্তর : জন্মের সময় ওজন হতে হবে প্রায় সাত পাউন্ড। এর তিন গুণ হবে এক বছরে। কারো যদি জন্মের সময় ওজন সাত পাউন্ড হয়, তার ২১ পাউন্ড হবে। তার পর প্রতি বছরে পাঁচ পাউন্ড করে বাড়ার কথা, পাঁচ বছর পর্যন্ত। তবে অনেক সময় দেখা যায়, বেশি বেড়ে যাচ্ছে, এটি হলো মুটিয়ে যাওয়া। আরেকটা দিক আছে, শুকিয়ে যায়। শুকিয়ে যাওয়া মানে হচ্ছে শিশুটি পুষ্টি পাচ্ছে না। এটা গণনা আমাদের বিএমআই (বেসিক ম্যাটাবলিক ইনডেক্স)-এর মাধ্যমে করতে হয়। ইনডেক্সের আদর্শ মান হলো ২৭ বা ২৮। এ রকম থাকলে ভালো।
প্রশ্ন : শিশু কেন মুটিয়ে যায়। তখন কী করেন আপনারা?
উত্তর : সাধারণত সাত-আট বছরের সময় শিশুরা বেশি মুটিয়ে যেতে থাকে, হয়তো সে তেমন নড়াচড়া করে না। জাঙ্ক ফুড বেশি খাচ্ছে। চিপস খাচ্ছে। চিজ খাচ্ছে। এগুলো থেকে তাড়াতাড়ি ওজন বেড়ে যায়। তখন তাদের আমরা পরামর্শ দিই। মাকে বোঝাই, শিশুটিকে একটু বাইরে গিয়ে খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যায়াম করতে হবে। স্কুলে যদিও পিটির ব্যবস্থা আছে, তবে সেটি পর্যাপ্ত নয়। এর পাশাপাশি ডায়েট চার্ট দিয়ে দিই। কী কী খাবে, বুঝিয়ে দিই। তিন মাস পর আবার আসতে বলি। তখন দেখা হয় ওজন বাড়ল, না কমে গেল তার।
প্রশ্ন : শিশুর অতিরিক্ত ওজনের ফলে কী কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : ওজন বেশি হলে সব দিকেই চর্বিযুক্ত টিস্যুগুলো বেশি বেড়ে যায়। তখন হয়তো দৌড়াচ্ছে, কিন্তু পারছে না। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বা হাঁপাচ্ছে, এ ধরনের সমস্যা হবে। তার পর যখন আরেকটু বড় হবে, তখন হয়তো হাঁটুতে ব্যথা করবে। এমনও রোগী আছে, ওজনাধিক্যের কারণে কোমরের ব্যথা নিয়ে আসছে। অথচ সে বয়ঃসন্ধিকালে রয়েছে। শিশু মুটিয়ে গেল কখনো কখনো হয়তো দেখতে ভালো লাগে। তবে এটি ভবিষ্যতের জন্য খারাপ।
প্রশ্ন : যারা মুটিয়ে যায় তাদের জন্য এটি রোধে কী পরামর্শ থাকবে?
উত্তর : পারিবারিক ইতিহাসে যদি মুটিয়ে যাওয়া বিষয়টি থাকে, তবে অবশ্যই পরামর্শ দিতে হবে। খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাচ্চা তো সব ধরনের জিনিস খাবে। কোল্ড ড্রিংস খেতে না বলি। ফাস্ট ফুড খাবে না। সবজি বেশি খাবে। প্রোটিন খাবে। চর্বিজাতীয় যেকোনো খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
প্রশ্ন : আপনারা যে খাদ্যতালিকা দেন, সেটি যদি অনুসরণ না করে তবে জটিলতা কী কী হতে পারে, সেটি একটু বুঝিয়ে বলবেন?
উত্তর : ওজন আস্তে আস্তে বেড়ে যাবে। ডায়াবেটিস হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
প্রশ্ন : একটি শিশু যখন মুটিয়ে যাচ্ছে, তখন তার মা-বাবারা কখন সচেতন হবে বলে মনে করেন? কোন কোন বিষয় দেখলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?
উত্তর : আসলে অনেক সময় মা-বাবারা বুঝতেই পারেন না। আমি যখন তাঁদের বলি, তখন তাঁরা বলেন—আরো মোটা ছিল, এখন কমেছে। তাঁরা শিশুটিকে হয়তো মোটা দেখতেই পছন্দ করেন। তখন আমি বলি, এর থেকে আরো কমতে হবে। আমরা দেখার পাশাপাশি কখনো পুষ্টিবিদদের কাছে পাঠাই। তাঁর কাছে গেলে কোন খাবারে কত ক্যালরি আছে, বুঝিয়ে দেন।
প্রশ্ন : শিশুরা কী সহযোগিতা করে এ ক্ষেত্রে?
উত্তর : শিশুকে যদি আপনি আদর করেন, তখন সে সহযোগিতা করবে। বুঝিয়ে বললে যে ওজন না কমালে তোমার বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তখন সে কথা শুনে, চেষ্টা করে ওজন কমাতে।
ডা. কমল কলি হোসেন। তিনি ইউএসএ ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাইমারি কেয়ার প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার।
source:ntv