বাচ্চার সাথে সুন্দর সময় কাটানোর ১০ টি টিপস

আজকাল যুগটাই এমন যে আমাদের সবারই সময় এর খুবই অভাব। চাকরিজীবী বাবা মায়ের পক্ষে সন্তান কে সময় দেয়াটা অনেক কঠিন।  আশার খবর এটাই যে, অনেক গবেষণাই দেখা গেছে ছোট শিশুরা বাবা মায়ের সাথে লম্বা সময় এর চাইতে সুন্দর সময় কাটাতেই বেশী ভালবাসে। হতেই পারে আপনি বাচ্চার সাথে সারাদিন থাকতে পারছেন না। কিন্তু যতটুকুই থাকবেন, তার সঠিক ব্যবহার করুন। এতে বাচ্চার যেমন ভালো তেমনি  আপনি নিজেও সারাদিনের stress থেকে মুক্তি পেতে পারেন সহজেই।

বাচ্চার সাথে কিছু সুন্দর সময় কাটানো বাচ্চার বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন যখনি বাচ্চার মনে হয় সে আপনাকে নিজের মত করে পাচ্ছেনা তখনি সে হয়ত অকারণে কান্না বা জিদ ধরে থাকবে। এটা আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা। তাই চেষ্টা করুন প্রতিদিন অন্তত কিছুটা সময় পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে বাচ্চার সাথে সময় কাটানোর। এটা বাবা এবং মা দুজনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। নিচে বাচ্চার সাথে সুন্দর ভাবে সময় কাটানোর ১০ টি টিপস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

টিপস- ১

বাচ্চাকে নিয়ে কিছু সময় বাইরে থেকে ঘুরে আসুন। বাইরে বলতে দূরে কোথাও না। বাসার নিচে রাস্তায় হোক বা মুদির দোকান থেকে কিছু কিনতে যাওয়ার সময় ই হোক, বাচ্চাকে সাথে নিয়ে যান। কিছুটা সময় তার হাত ধরে হাঁটুন, গল্প করুন বা তার সাথে ছোটখাটো একটা রেস দিতে পারেন যাতে আপনি অবশ্যই হারবেন। দেখবেন এই অল্প সময়টুকু বাচ্চার উপর কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তার আচরণেই আপনি অনুভব করতে পারবেন।

টিপস- ২

বাচ্চাকে আপনার কাজের অংশ করে নিন। কাজের সময় বাচ্চাকে টিভি বা মোবাইল ধরিয়ে না দিয়ে তাকে সাথে নিয়েই কাজ করুন। রান্নার সময় তাকে হয়ত একটা পেঁয়াজ ছিলতে দিলেন, ঘরের কাজ করার সময় তাকে কিছু এগিয়ে দিতে বললেন বা টুকটাক কাজ করতে দিলেন। যখন আপনার লক্ষ্মীসোনা আপনার চারপাশে ঘুরঘুর করে ঘুরে বেড়াবে আপনার সাথে আধো আধো বুলিতে কথা বলবে দেখবেন তার যেমন এক দফা খেলা হয়ে যাবে আর আপনার হাতের কাজও স্বস্তিতে ফুরিয়ে যাবে। এতে বাচ্চাও অনেক উৎসাহিত হবে।

টিপস- ৩

বাচ্চাকে বই পরে শোনান। এতে বাচ্চা যেমন শিখবে তেমনি আপনাদের বন্ডিং টাও ভালো হবে। বাচ্চার জন্য এমন বই নিন যাতে রঙ আর ছবির আধিক্য থাকবে। পড়ার সাথে সাথে বাচ্চাকে বই এর বিভিন্ন রঙ এবং ছবির সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। সাথে সাথে কিছু প্রশ্ন করুন। এবং তার সঠিক উত্তরের তারিফ করুন।

টিপস- ৪

সকালে নাশটার সময় বা রাতে খাওয়ার টেবিলে,যখন পারবেন দিনের একটা সময় পরিবারের সবাই এক সঙ্গে সময় কাটান। খেতে খেতে সারা দিন কার কেমন কাটল তা নিয়ে গল্প করুন। কোনও গুরু গম্ভীর আলোচনা নয়, টিচার বা পড়ার গল্প নয়। ছুটির মেজাজে ওর সাথে গল্প করুন।গল্পচ্ছলে টেবিল ম্যানার্স, খাবারের স্বাদ, উপকরণ, রঙ বা রেসিপি নিয়ে আলোচনা করুন। বাচ্চাদেরও ভাল লাগবে।

টিপস- ৫

এক টুকরো কাগজ আর কিছু রঙ নিয়ে বাচ্চার সাথে আঁকিবুঁকি শুরু করুন। দেখুন সে কি আঁকতে পছন্দ করে। যদি গাড়ি পছন্দ করে তো কাগজে কিছু গাড়ি এঁকে দিন। আপনার বাচ্চা যেটাই আঁকুক আপনি শুধু তাকে সাবাস দিতে ভুলবেন না। আপনার ছোট্ট একটু উৎসাহ ওর জন্য অনেকখানি ভালোলাগা তৈরি করবে। এই খেলার সময়টুকু সন্তানের সাথে আপনার সম্পর্ক সুন্দর করবে আর বাচ্চার মেধার বিকাশ সাধন ও হবে।

টিপস- ৬

ঘুমানোর আগে কিছুটা সময় বাচ্চার সাথে সময় কাটান। ঘুমানোর আগে বাচ্চার কোন প্রিয় গল্প বলতে পারেন। এতে বাচ্চা শান্ত থাকবে এবং খুব সহজেই ঘুমিয়ে যাবে। ঘুমানোর অন্তত ঘণ্টা খানেক আগে থেকে টিভি বন্ধ রাখুন।

টিপস- ৭

আপনার শখের কোন কাজ থাকলে বাচ্চাকে সাথে নিয়ে করুন। আপনি হয়ত বাগান করতে পছন্দ করেন বা ছবি আঁকতে। এসব কাজে বাচ্চাকে সম্পৃক্ত করুন। দুজনের এ ভালো সময় কাটবে।

টিপস- ৮

সব বাচ্চাই বাইরে ঘুরতে দারুন ভালবাসে। আপনাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনটিতে বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পরুন। দূরে কোথাও যেতে না চাইলে কাছে পিঠেই কোথাও ঘুরতে যান। আজকাল দারুন সব ফাস্ট ফুডের দোকান আছে যেখানে খাওয়ার পাশা পাশি বাচ্চাদের খেলারও চমৎকার জায়গা আছে। চাইলে ঘুরে আসতে পারেন।

টিপস- ৯

টিভির রিমোটটা বাচ্চার হাতে ছেড়ে দিয়ে কোথাও চলে না গিয়ে বা নিজে টিভি দেখার সময় বাচ্চা বিরক্ত করবে বলে তাকে সরিয়ে না দিয়ে উল্টো আপনি আপনার জুনিয়রকে সাথে নিয়ে টিভির সামনে বসে পড়ুন। বাচ্চার জন্য উপযোগী কোন মুভি চালিয়ে দিয়ে একসাথে মুভি দেখাও কিন্তু এক প্রকার খেলাই। আর একটা ব্যাপার এই সময়টুকু আপনার সমস্ত বড়মানুষি দূরে রেখে আপনার বাচ্চার বন্ধু হয়ে উঠুন, মন খুলে বাচ্চামি করুন। এতে করে আপনার বাচ্চা অসম্ভব সুন্দর কিছু মুহূর্ত উপভোগ করার সাথে সাথেই নিজের মানসিক বিকাশে বেশ খানিকটা এগিয়ে যাবে।

টিপস- ১০

আপনার বাচ্চা যদি রং করতে ভালবাসে, তাহলে কাপড়ে করা যায় এমন রঙ কিনে দিতে পারেন। বাড়িতে বের করে দিন ওদেরই পুরানো কোন টি-শার্ট । এবার মনের আনন্দে ওদেরকে রঙ করার সুযোগ দিন।

একটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরী। সেটা হোল যেটুকু সময় বাচ্চার সাথে কাটাবেন সেটুকু সময় পূর্ণ মনোযোগ আপনার বাচ্চার দিকে দিন। প্রয়োজনে মোবাইল বন্ধ করে রাখুন। যা আপনার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে তা হয়ত আপনার সন্তানের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ না । বাচ্চাদের সাথে যথেষ্ট সময় দিতে না পারলে কোন উপহার দিয়ে পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন না। এটা ঘুষ দেয়ারই সমান। কোন কাজের জন্য সময় দিতে না পারলে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করুন প্রয়োজনে একদিন ছুটি নিয়ে বাচ্চাদের সময় দিন। একে অপরকে সঙ্গ দেওয়াই হয়ে উঠুক উপহারের সামিল।

তথ্য supermom

Sharing is caring!

Comments are closed.