শিশুর আচরণগত সমস্যা : কী করবেন?

শিশুর মানসিক সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো আচরণগত সমস্যা। এর ব্যবস্থাপনা কীভাবে করা হয়?  সেলিনা ফাতেমা বিনতে শহিদ। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন : আচরণগত সমস্যা নিয়ে আসলে একে কীভাবে ব্যবস্থাপনা করেন?

উত্তর : আসলে ছোট বাচ্চা ও বড় বাচ্চা তাদের মধ্যে একটু পার্থক্য রয়েছে। বেশি ছোট বাচ্চা হলে সেশনে তাদের বসানোর পাশাপাশি মা-বাবাকেও বসাই। প্রাপ্তবয়স্কদের সাইকোথেরাপিতে তারা নিজেরাই আসেন, একা বসলেই হয়। তবে শিশুর সাইকোথেরাপি আলাদা। সেখানে মা-বাবাকে যুক্ত করতে হয়। কারণ, শিশুরা তো মা-বাবার প্রতি নির্ভরশীল। তাই বেশি ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মা-বাবাকে যুক্ত করি। অনেক সময় দেখা যায় ভুল আচরণে মা-বাবা পুরস্কার দিয়ে ফেলেন।

শিশু হয়তো মাকে বলল, ‘একটি রং পেনসিল দাও।’ মা হয়তো খেয়াল করছে না, নিজের কাজে ব্যস্ত। তবে যখন শিশুটি চিৎকার করল তখন দৌড়ে এসে বলল, ‘চিৎকার করছ কেন? নাও।’ সঙ্গে সঙ্গে দিল। কোন সময়ে দিল? চিৎকার করল যখন, তখন দিল। এর পর থেকে সে আর স্বাভাবিক আচরণ করবে না। তাহলে মা কী করলেন, ভুল আচরণে পুরস্কার দিলেন। এইভাবে কিন্তু অনেক সময় আমরা ভুল আচরণগুলো প্রশ্রয় দিয়ে থাকি। আবার সঠিক আচরণগুলো খেয়াল করি না।

বাচ্চা পড়তে বসল, তাকে এত বেশি বকছি যে পড়ার প্রতি আগ্রহ চলে গেছে। এটি তার কাছে শাস্তি। এ জন্য খেয়াল করতে হবে কোথায় বাচ্চাকে শাস্তি দিচ্ছি। আর কোথায় পুরস্কার দিচ্ছি।

আর একেক শিশু একেক রকম। একজনের কাছে চকবার পুরস্কার। আরেকজন হয়তো চকবার পছন্দই করে না। অনেক সময় ভুল জায়গায় পুরস্কার দিয়েও আমরা আচরণগত সমস্যা তৈরি করি। আবার অনেক সময় পর্যবেক্ষণগত শিক্ষার মধ্য দিয়ে আচরণগত সমস্যা হয়। একটি বাচ্চা হয়তো দুষ্টু বাচ্চাকে দেখছে। সে টানা দুষ্টুমি করছে। আর এর জন্য পুরস্কার পাচ্ছে। সে সেটাও পর্যবেক্ষণ করতে পারে। মা-বাবার মধ্যে রাগজনিত সমস্যা রয়েছে। এগুলোও পেতে পারে। আবার জিনগতভাবে কেউ আবেগপ্রবণ বেশি। এ জন্য তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কম। অল্পতে উদ্বিগ্ন হয়ে যায়। তখন ভুল আচরণগুলো করে ফেলে। ভুল আচরণে পুরস্কার পেয়ে, সঠিক আচরণে প্রশংসা না পেয়ে অনেক সময় এ ধরনের সমস্যা হয়।

আমরা সব সময় বলি যে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের পেরেনটিংয়ের একটি প্রশিক্ষণ শুরু করেছি।

এর তিনটি গোল রয়েছে। স্বাভাবিক পেরেনটিং। বাচ্চার আত্মবিশ্বাস কীভাবে তৈরি করবে? এটি শেখানো হলো স্বাভাবিক পেরেনটিং। আরেকটি হলো প্রতিরোধ। সমস্যা নাই হতে পারে। আরেকটি হলো সমস্যা হয়ে গেলে আমরা কী করব? একেকটি রোগের ওপর আলাদা করে সেটি করা হয়। এই প্রশিক্ষণ শুধু মা-বাবাকে নিয়ে। আর বাইরে তো দেখা গেছে বাচ্চা হওয়ার আগেই মা-বাবাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

প্রশ্ন : মা-বাবার পাশাপাশি বাচ্চাটিকে কীভাবে দায়িত্ব দিয়ে থাকেন? উত্তর : তাদের ক্ষেত্রেও আলাদা সাইকোথেরাপি রয়েছে। সেখানে বাচ্চার সঙ্গে একা বসা হয়।

এখানে অনেক শিডিউল থাকে। হোমওয়ার্ক থাকে। বাচ্চাকে যেমন দেওয়া হয়, বাচ্চার মা-বাবাকেও সেটা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। বাচ্চার সঙ্গে বসা হয়, পাশাপাশি মা-বাবার সঙ্গেও আলাদা করে বসা হয়। বোঝানো হয় শিশুকে কীভাবে ব্যবস্থাপনা করবে।

cl-ntv

Sharing is caring!

Comments are closed.