শিশুর নাকে পলিপ : কী করবেন?

নাকের পলিপ অতি পরিচিত একটি সমস্যা। সামান্য নাক বন্ধ অবস্থায় নাকের মধ্যে মাংসপিণ্ডের মতো কিছু একটা দেখলেই অনেকে সেটিকে নাকের পলিপ বলে মনে করেন। যদিও নাকের মধ্যকার পলিপ অনেকটা পিণ্ডাকৃতিরই হয়ে থাকে, তবে নাকের মধ্যে সব ধরনের পিণ্ডই কিন্তু পলিপ নয়। পলিপ কথার একটি বিশেষ অর্থ রয়েছে। পলিপ হচ্ছে ফুলে যাওয়া ঝিল্লির একটি রূপ। এটি ফুলে একটি বিভিন্ন আয়তনের পিণ্ডের মতো হয়ে থাকে। আকৃতি, আয়তন ও রঙের দিক থেকে সাধারণভাবে নাকের পলিপ দেখতে অনেকটা পরিপক্ব আঙুর ফলের মতো। পলিপের রং কখনোই মাংসপেশির মতো লালচে হয় না। পলিপ আঙুর দানার মতো গোলাকার ও ফ্যাকাসে রঙের হয়ে থাকে। নাকের পলিপ নাক ও সাইনাসের (বায়ুভর্তি কুঠুরি) মধ্যস্থিত ঝিল্লির স্ফীতাকার পিণ্ডবিশেষ।

নাকের পলিপ সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। 
১. ইথময়েডাল পলিপ, যা উভয় নাসারন্ধ্রেই হয়ে থাকে। এই ধরনের পলিপ শিশুদের কম হয়।

২. এন্ট্রোকোয়োনাল পলিপ, এটি শিশুদের বেলায় বেশি দেখা দেয়। দুই ধরনের পলিপ হওয়ার পেছনের কারণও ভিন্ন। একইভাবে উপসর্গ ও চিকিৎসা কৌশলেও ভিন্নতা রয়েছে। এবার পৃথকভাবে ধারণা নেওয়া যায়, এ দুই ধরনের পলিপ সম্পর্কে।

এন্ট্রোকোয়ানাল পলিপ
এ ধরনের পলিপের উত্থান ঘটে ম্যাক্সিলারি সাইনাসের অভ্যন্তরে বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী মুখের আশপাশে। ম্যাক্সিলারি সাইনাসের অবস্থান চিবুকের নিচে। বায়ুভর্তি দুটো কুঠুরি থাকে নাকের দুই পাশে। এন্ট্রোকোয়ানাল পলিপ সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। সাধারণত যেকোনো একদিকে একটিমাত্র হয়ে থাকে। এ ধরনের পলিপের তিনটি অংশ থাকে। এর বোঁটার অংশটি থাকে ম্যাক্সিলারি সাইনাসের ভেতরে মুখের কাছে, পায়ের স্ফীত অংশটি থাকে নাকের সুড়ঙ্গে, আর শেষের অংশটি নাকের পেছনের ছিদ্র দিয়ে মুখগহ্বরে ঝুলে থাকে।

যে কারণে হয়
যদিও সঠিক কারণ জানা যায়নি, তবে ধারণা করা হয়, নাকের অ্যালার্জি যখন সাইনাসের অভ্যন্তরীণ ঝিল্লিকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে এবং বারবার সেখানে সংক্রমণ হয়, তখন ধীরে ধীরে ম্যাক্সিলারি সাইনাসের অভ্যন্তরে বহিনির্গমনের পথের আশপাশে স্ফুরণ ঘটে এই পলিপের। তারপর ক্রমান্বয়ে বেড়ে উঠতে থাকে। এভাবেই সাইনাস থেকে বেড়ে বেরিয়ে আসে নাকের মধ্যে এবং একপর্যায়ে বড় হতে হতে, সেটি নাকের পেছন দিক দিয়ে মুখের ভেতরে ঝুলে পড়ে।

কীভাবে বোঝা যাবে
প্রথম দিকে একদিক বন্ধ থাকে। নাক বন্ধ থাকার জন্য গলার স্বর পরিবর্তিত হয়ে নাকিসুরে কথা তৈরি হয়। নাক বন্ধ থাকার কারণে সব সময়ই নাক দিয়ে কিছু না কিছু শ্লেষ্মা ঝরে। নাক পর্যবেক্ষণ করলে নাকের ভেতরে ফ্যাকাসে মাংসপিণ্ডের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়।

এন্ট্রোকোয়ানাল পলিপ নির্ণয়ের জন্য এক্সরে এবং সিটি স্ক্যান করলেই বোঝা যায় পলিপের অবস্থান ও ব্যাপকতা। সেইসঙ্গে নাকের অন্য কোনো টিউমারের কারণে এটি হয়েছে কি না তাও দেখা প্রয়োজন।

চিকিৎসা কেমন হবে
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নাকের এই পলিপ নাকের ভেতর দিয়ে অথবা ঠোঁটের নিচ দিয়ে পাশের দাঁতের গোড়া বরাবর ছিদ্র করে ম্যাক্সিলারি সাইনারের ভেতর থেকে সমূলে উৎপাটন করা যেতে পারে। সঠিক অস্ত্রোপচারের পর সাধারণত এ ধরনের নাকের পলিপ আর পুনরায় বেড়ে উঠতে দেখা যায় না। ওষুধ দিয়ে এ ধরনের পলিপের চিকিৎসা সম্ভব নয়। অস্ত্রোপচারই কার্যকর চিকিৎসা। সনাতন পদ্ধতির অস্ত্রোপচারে পুনরায় পলিপ দেখা দেওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আধুনিক পদ্ধতির ফাংশনাল এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারিতে নিরাময়ের হার বেশ ভালো হয়। কারণ, এ ক্ষেত্রে নাকের ভেতর সরু এন্ডোস্কোপ ঢুকিয়ে মনিটরে বড় আকারে নাকের ভেতরের সবকিছু ভালোভাবে দেখা যায় এবং সহজেই পলিপ বের করে আনা যায়।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

Sharing is caring!

Comments are closed.