কখন কথা ফুটবে বাবুর মুখে?

শিশুদের বড় হওয়ার মুহূর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম স্মরণীয় হলো যখন তার মুখে কথা ফোটে। বয়স তিন হতে হতেই বাচ্চারা কথা বলতে শিখে যায়। সাধারণত এক বছর বয়সে শোনা যায় বাবুর মুখে প্রথম বুলি। দুই বছরে পা দিলে এক সঙ্গে দুতিনটি শব্দ বলতে পারে বাচ্চারা, বয়স আড়াই বছর হতে না হতেই ছোট ছোট বাক্য বলতে শিখে ফেলে।

ধাপে ধাপে কথা শেখা

০-১ বছর

প্রথম এক বছরে বাচ্চারা বাবা-মায়ের কণ্ঠস্বর শুনে তা চেনার চেষ্টা করে, ভাষা সম্পর্কেও বোঝা শুরু হয় তখন থেকেই। এই বয়সে শব্দ নিয়ে নিজে নিজেই নানা ধরনের পরীক্ষা শুরু করে বাচ্চারা, মুখ দিয়ে নানা ধরনের শব্দ করার মাধ্যমে।

এভাবে নানা ধরনের শব্দ করতে করতেই বাচ্চারা কথা বলতে শিখে ফেলে। এই সময়টাতে বাবা-মায়ের উচিৎ বাচ্চাদের সঙ্গে বেশি করে কথা বলা। বাচ্চাদের নিজস্ব ভাষাতেই তাদের সঙ্গে কথা বলুন, সে কোনো অর্থহীন শব্দ করলে তা অনুকরণ করুন।

১-৩ বছর

বয়স ১ পেরুলেই বাচ্চাদের কথা শেখার গতি বেড়ে যায়। ২ বছরের মধ্যে বাচ্চারা দুই থেকে তিনটি শব্দ একসঙ্গে বলতে শিখে ফেলে। ফলে বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলা সহজ হয়ে যায়। ৩ বছরে গড়াতে গড়াতে সোনামণির বলা সব কথাই বুঝতে পারে তার পরিবারের সদস্যরা।

যদি হয় ব্যতিক্রম

বাচ্চারা কোনো শব্দ ভুল বললে বাবা-মায়ের উচিৎ তার সঠিক উচ্চারণ তখনই শিখিয়ে দেয়া। কিন্তু কোনো কারণে যদি আপনার বাচ্চার বলা কথা একেবারেই দুর্বোধ্য মনে হয়, যদি কথা বোঝানোর জন্য বাচ্চা ইশারা করা শুরু করে, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

এছাড়া এই বয়স থেকেই দেখা দিতে পারে শিশুর তোতলামির সমস্যা। অনেক সময় দেখা যায়, বয়স বেড়ে গেলেও অনেক শিশু কথা বলতে পারে না। এমন হলে হতাশ হবেন না, কিংবা সন্তানের ওপর কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করবেন না। শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন, বিষয়টি সম্পূর্ণ চিকিৎসকের ওপর ছেড়ে দিন।

বাচ্চাদের কথা বলার কিছু সাধারণ সমস্যা

নতুন নতুন কথা শেখার সময় ছোটখাটো ভুল বাচ্চারা করবেই, এগুলো নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এছাড়াও সাধারণ কিছু সমস্যা দেখা যেতে পারে যেক্ষেত্রে চিকিৎসকের সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে, সেগুলো হলো:

# কোনো শব্দকে ভুল উচ্চারণ করা। যেমন—ডিমকে ‘তাম’ বলে কিছু কিছু বাচ্চা। এক্ষেত্রে সময় থাকতে বাচ্চাদের ভুল শুধরে দেয়া উচিৎ।

# কোনো শব্দ অর্ধেক উচ্চারণ করা, যেমন – মোবাইলকে ‘মোবাই’ বলা। নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত এরকম ভুল হওয়া স্বাভাবিক, ভুল শুধরে দেয়ার পরও যদি বড় হয়ে বাচ্চারা এভাবে কথা বলে তাহলে স্পিচ থেরাপি দিতে হয়।

# কথা শুনে তা বুঝতে না পারা, দিক চিনতে না পারা, প্রশ্নের উত্তর না দেয়া, কোনো তথ্য শুনে তা বুঝে নেয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে।

# জটিল বাক্য গুছিয়ে বলা, শব্দ নির্বাচন, সঠিক শব্দ ব্যবহার করে বাক্য তৈরি করার বেলায় সমস্যা হওয়া।

# সমবয়সী কারও সঙ্গে কথা বলা, খেলা করার বেলায় সমস্যা হওয়া। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাচ্চার আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে তা অটিজমের লক্ষণও হতে পারে।

# পড়ার সময় শব্দ উচ্চারণে জড়তা দেখা দেয়া।

অভিভাবকরা মনে রাখবেন

বাচ্চাদের কথা বলায় সমস্যা হতেই পারে, তবে যত কম বয়সে সমস্যাটি ধরা পড়বে, তত দ্রুত সমাধান করা সম্ভব। যদি আপনার সন্তানের কথা বলায় কোনো ধরনের সমস্যা চোখে পড়ে, দেরি না করে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। বিশেষ করে তোতলানো, কম কথা বলা, অক্ষরজ্ঞান সম্পর্কিত সমস্যাগুলো অবহেলা করা উচিৎ নয় একদমই।

যদি আপনার সন্তান স্কুলে যাওয়া শুরু করার পড়ার পরও আপনি এই লক্ষণগুলো দেখতে পান, হতাশ হবেন না। বয়সে বড় শিশুদের ক্ষেত্রে কথা বলার সমস্যা দূর করতে একটু বেগ পোহাতে হয়, তবে ধৈর্য ধরলে সবই সম্ভব।

Sharing is caring!

Comments are closed.