মেয়েদের জরা’য়ুমুখ ক্যা’ন্সার ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা ও ডোজ শিডিউল

জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ভয়াবহতা ও এর প্রতিরোধক টিকা (ভ্যাক্সিন) সম্পর্কে সবার জানা জরুরী। কারন সারা পৃথিবীতে মেয়েদের ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর কারণ হিসাবে জরায়ু ক্যান্সারের অবস্থান ৪র্থ। জরায়ুমুখ ক্যান্সারের কারণ হিসেবে দায়ী করা হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV)-কে। বলা হয়ে থাকে,

প্রতিটা মেয়ের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) দিয়ে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা সারা জীবনে প্রায় ৮০ শতাংশ। মরণঘাতি এই ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্যই বের হয়েছে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ভ্যাক্সিন। ভ্যাক্সিন নেয়ার মাধ্যমে জরায়ুমুখের ক্যান্সার (Cervical cancer) প্রায় শতভাগ প্রতিরোধ করা যায়।

এই টিকার প্রথম ব্যবহার শুরু হয় অস্ট্রেলিয়াতে ২০০৭ সালে। ২০১৩ সালে US FDA এর অনুমতি দেন। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের ১৬ ও ১৮ নাম্বার স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে এই ভ্যাক্সিন বানানো হয়েছে। ০, ১, ৬ মাস হচ্ছে এই ভ্যাক্সিনের ডোজ শিডিউল। অর্থাৎ প্রথম ডোজ দেয়ার একমাস পর দ্বিতীয় ডোজ এবং প্রথম ডোজের ৬ মাস পরে তৃতীয় ডোজ দিতে হবে। ভ্যাক্সিনের দাম ডোজ প্রতি প্রায় দুই হাজার টাকা।

জরায়ু মুখ ক্যান্সারের ভ্যাক্সিন খুবই কার্যকর। ৩ ডোজের এই ভ্যাক্সিন দেয়ার আদর্শ সময়কাল হচ্ছে বয়স যখন ১১ থেকে ১২ বছর। এই ভ্যাক্সিন অবশ্যই লাইফের প্রথম ইন্টারকোর্স বা যৌন মিলনের আগেই দিতে হবে। কারন ওই বয়সে সাধারণত শরীর তুলনামূলক ইনফেকশন ফ্রি বা জীবাণুমুক্ত থাকে। বিবাহিতরা ভ্যাক্সিন দিতে চাইলে pap smear নামক টেস্ট করে HPV infection আছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আরেকটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, জরায়ু ক্যান্সারের টিকা জরায়ুতে নয় বরং হাতে দেয়া হয়।
ভ্যাক্সিন নেয়ার মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রায় শতভাগ প্রতিরোধ করা যায়।

অনেকেই প্রশ্ন করেন, ৩ মাসের গর্ভবতী (প্রেগন্যান্ট) মা কি জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ভ্যাক্সিন দিতে পারবে? উত্তর হচ্ছে, অবশ্যই দেয়া যাবে না। কেননা গর্ভাবস্থায় এই ভ্যাক্সিন দিলে মা ও জরায়ুর বাচ্চার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। মজার বিষয় হচ্ছে, এই ভ্যাক্সিন পুরুষদেরও দেয়া যায়। পুরুষ সঙ্গী ভ্যাক্সিন নিলে তার পার্টনার বা স্ত্রী’র জরায়ু ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। শুধুমাত্র ভ্যাক্সিন নয়, গবেষণায় দেখা গেছে পুরুষ সঙ্গীর সুন্নতে খাৎনা (circumcision) করা থাকলেও মহিলাদের জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।

মনে রাখতে হবে, এই ভ্যাক্সিন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV)-এর ইনফেকশন ও ক্যান্সার সারায় না। বরং ভাইরাস দ্বারা ইনফেকশন হওয়া প্রতিরোধ করে। অর্থাৎ ইনফেকশন হতে দেয় না। তাই ইনফেকশন হওয়ার আগেই জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ভ্যাক্সিন দেয়া জরুরী। কেননা, এই ভ্যাক্সিন ভয়ংকর ও প্রাণঘাতি ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাকে শুন্যের কোঠায় নিয়ে আসে।

ডাঃ সাঈদ সুজন-রেসিডেন্ট (এমএস-ইউরোলজি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।(susastho24)

Sharing is caring!

Comments are closed.