মাহে রমজানে রোজাদার গর্ভবতীর যে নিয়ম মানা আবশ্যক !

রমজানে গর্ভবতীর রোজা রাখার ক্ষেত্রে শারীরিক কারণেই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। সাত মাসের গর্ভবতী রীমা (ছদ্মনাম)। তিনি এবারের রমজানে সবকটি রোজা রাখার নিয়ত করেছেন। এ প্রসঙ্গে রীমা জানান, এসময় রোজা রাখার ক্ষেত্রে কি ধরনের রুটিনমাফিক জীবনযাপন করলে তার গর্ভের সন্তান এবং তার কোনো শারীরিক সমস্যা হবে না, এ বিষয়ে সঠিক ধারণা নেই।
তবে যতটুকু পারছেন সতর্ক থাকার চেষ্টা করছেন। এ সময়ে রোজা রাখা কষ্টকর। শরীর দুর্বল লাগে, তাও তিনি রোজা রাখছেন। এখনও কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। রাতে তারাবির নামাজ আদায় করেন। তেমন অসুবিধা হয় না। বিশ রাকাত নামাজই আদায় করেন। মাসুমা তিন মাসের গর্ভবতী। তিনিও রোজা রাখছেন। রোজা রাখতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম তিন মাস কারও কারও ক্ষেত্রে কম-বেশি বমি বমি ভাব হয়। না খেয়ে থাকলে বমি ভাব কম হয়, এমনকি বমিও হয় না। আমারও কিছুটা বমির ভাব হয়। সেহরির সময় বমিনাশক ওষুধ খেয়ে নিই। এতে সারাদিন ভালো থাকি।

গর্ভবতীদের রোজা রাখা সম্পর্কে ঢাকা মেডিকেল কলেজের গাইনি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. ফজলে নূর-এ-তাওহিদা বলেন, গর্ভবতীদের যেহেতু বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন, তাই খাদ্য নির্বাচন করতে হবে অধিকতর ক্যালোরিসম্পন্ন। প্রয়োজন হলে মাকে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে। তিন মাসের পর সাধারণত বমির ভাব কমে যায়। এই সময়ে গর্ভবতী মায়েরা রোজা রাখতে পারেন। সেহরিতে তৈলাক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলবেন। প্রচুর পানি, শরবত ও ফলের রস পান করবেন। চা ও কফি এড়িয়ে চলবেন। খেজুর খাবেন বেশি। খেজুরে অনেক বেশি ক্যালরি ও খাদ্যগুণ বিদ্যমান। এছাড়া আম, কাঁঠাল, তরমুজ, বাঙ্গি, কলা, ডাব, নারিকেল ইত্যাদি ফল পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। যেসব খাবারে বুক জ্বালা ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয় সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার ঝালযুক্ত ভর্তা না খাওয়াই ভালো। তারপরও অসুবিধা হলে এন্টাসিড ট্যাবলেট খেলে সুফল পাওয়া যাবে।

তিনি আরও বলেন, সারাদিন পানি না খাওয়ার ফলে প্রস্রাবে হালকা জ্বালা হতে পারে। ইফতারের পর ঘন ঘন পানি খেয়ে তা পূরণ করতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়িয়ে চলতে হবে। শাকসবজি, পানি, ফলমূল সঠিক পরিমাণে খেলে এটা এড়ানো সম্ভব। তবে, বেশি অসুবিধা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সিরাপ খাওয়া যেতে পারে। আবহাওয়ার কারণে গর্ভবতীর ত্বকের সমস্যা হতে পারে। প্রতিদিন গোসল করে ত্বকের সমস্যা সমাধান করা যায়। হালকা জ্বর, কাশি ও অন্য যে কোনো অসুবিধায় অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। রমজান মাসে একবেলা বা দুবেলা খাওয়া যায় এমন ওষুধ খেলে রোজা ভাঙার প্রয়োজন হয় না। তবে সব কিছুই নির্ভর করবে মায়ের শারীরিক অবস্থার ওপর। রোজা রাখতে গিয়ে খেয়াল রাখতে হবে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের কোনো প্রকার ক্ষতি যেন না হয়।

গর্ভবতী মায়ের রোজার বিধান সম্পর্কে মাদরাসাতুল বালাগ ঢাকার অধ্যক্ষ মুফতি আহসান শরিফ বলেন, গর্ভবতী রোজা রাখলে গর্ভের বাচ্চার ক্ষতির আশঙ্কা হলে বা গর্ভবতী মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকলে, রোজা ভেঙে ফেলা বা না রাখা জায়েজ। তবে পরবর্তীসময়ে এর কাজা আদায় করতে হবে। শারীরিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কারণে চিকিৎসক নিষেধ করলে রোজা না রেখে পরবর্তীকালে কাজা করার সুযোগ রয়েছে। কাফফারা দেয়া লাগবে না।
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে সূরা বাকারার ১৮৫নং আয়াতে বলা হয়েছে। ‘রমজান মাসেই কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে, সে যেন রোজা রাখে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, জটিলতা কামনা করেন না।’

Sharing is caring!

Comments are closed.