শিশুর নাকে কিছু ঢুকলে কী করবেন? ডা. সজল আশফাক।

কদিন ধরেই চার বছরের কন্যাশিশু সুমনার নাক দিয়ে দুর্গন্ধ আসছে। সে সঙ্গে এক নাক বন্ধ, বন্ধ নাক দিয়ে কিছুটা শ্লেষ্মা ঝরছে। এমনটি আগে কখনো হয়নি। এ নিয়ে মা কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এরই মধ্যে সপ্তাহখানেক পেরিয়ে গেছে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক ও সাধারণ ওষুধে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না; বরং দুর্গন্ধ কিছুটা কমে গিয়ে আবার বেড়েছে। সেই সঙ্গে দুর্গন্ধযুক্ত নাসারন্ধ্র দিয়ে পুঁজের মতো বেরিয়ে আসছে। কখনো কখনো পুঁজের সঙ্গে সামান্য রক্তও মিশ্রিত থাকছে। এ অবস্থায় সুমনাকে নেওয়া হলো নাক কান ও গলা বিশেষজ্ঞের কাছে।

বিশেষজ্ঞ নাক পর্যবেক্ষণ করে বললেন, সম্ভবত নাকের মধ্যে কিছু ঢুকিয়েছে শিশুটি। তিনি নাকের এক্স-রে করাতে বললেন। এক্স-রে থেকে নাকের মধ্যে ধাতব কিংবা রঞ্জনরশ্মি অভেদ্য কোনো বস্তুর উপস্থিতি দেখা গেল না। কাজেই নাকের মধ্যে এক্স-রে করলে বোঝা যায় না, এমন কোনো বস্তু নাকে ঢুকেছে বলে নিশ্চিত নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ। তাই সিদ্ধান্ত হলো, নাকের ভেতরের বস্তুটি বের করতে হবে। এদিকে সুমনার বাবা-মা ভাবছেন, নাকের মধ্যে কী ঢোকাতে পারে সুমনা? প্রত্যেক বাবা-মা এমনটিই ভাবেন। কিন্তু শিশুরা সহজাতভাবেই নাকের মধ্যে, কানের মধ্যে এটা-ওটা ঢোকাতে পারে। নাক, কান ও গলায় বাইরের কোনো বস্তু ঢুকে গেলে সেই বস্তুটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ফরেন বডি।

সাধারণত যেসব জিনিস শিশুরা নাকের ভেতর ঢোকায় :

  • যেকোনো ধরনের শস্যদানা ও বনজ, যেমন : ছোলা, মটর, বাদাম, শিমের বিচি, তেতুঁল বিচি, পাতার অংশ, ধান।
  • অন্যান্য জিনিস, যেমন : পুঁতি বা ছোট্ট বল, ছোট পাথরের টুকরা, বোতাম, ব্যাটারি, শার্টের বোতাম, কাগজ, মুড়ি, টিস্যু পেপার, পেনসিলের ইরেজার রাবার, ফোমের খণ্ড ইত্যাদি অনেক কিছুই নাকে ঢোকাতে পারে শিশুরা।
  • জীবিত কীটপতঙ্গের মধ্যে মশা-মাছি, উকুন ইত্যাদি ঢুকতে পারে।

কী থেকে কী হয়?

নাকের মধ্যে কোনো কিছু ঢোকানোর ঘটনা সাধারণত শিশুদের মধ্যেই দেখা যায়। এ কারণে কোনো শিশুর নাক দিয়ে দুর্গন্ধ-শ্লেষ্মা ঝরলে প্রথমেই তার কারণ হিসেবে নাকের মধ্যে বাইরের কিছু ঢুকেছে কি না, সেটা দেখা উচিত।

  • শিশুরা খেলাচ্ছলে কিংবা অবসরে হাতের কাছে এ ধরনের বস্তু পেলেই নাসারন্ধ্র দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়।
  • নাকের মধ্যে শরীরের অংশ নয় এমন কিছু ঢুকলে তার বাইরে শ্লেষ্মা জড়িয়ে নাকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়।
  • এর পর সেখানে জীবাণু বাসা বাঁধার কারণে সংক্রমণ হয়। তখন নাক থেকে একই সঙ্গে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ বেরিয়ে আসে।
  • অনেক সময় এসব বস্তু নাকের ভেতরের নিঃসরণের সঙ্গে বিক্রিয়া করে পাথরের সৃষ্টি করে, যাকে বলা হয় রাইনালিথ বা নাকের পাথর।
  • তবে এর বাইরে নাকে আঘাত কিংবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে নাকের মধ্যে বাইরের বস্তু নাক ফুটো করে ভেতরে ঢুকে থাকতে পারে।

নাকে কোনো কিছু ঢুকলে বোঝা যায় কীভাবে?

  • সাধারণত অভিভাবকরাই প্রথমে বিষয়টি আঁচ করতে পেরে চিকিৎসকের কাছে আসেন। অনেক সময় শিশু নিজেই বিষয়টি বাবা-মাকে বলে থাকে।
  • সাম্প্রতিককালে নাকের একদিক দিয়ে ছিদ্র বন্ধ হয়ে থাকলে।
  • বন্ধ নাক দিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত শ্লেষ্মা বেরিয়ে এলে।
  • নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হলে।
  • নাকের মধ্যে বাইরের কোনো বস্তু ঢুকলেই নাকে ব্যথা হতে পারে।
  •  নাকের মধ্যে বাইরের কোনো বস্তু ঢোকার কারণে নাকে হাঁচি হতে পারে।
  • শিশুর আশপাশের মেঝেতে নাকের ভেতর ঢোকাতে পারে সে রকম আরো কিছু বস্তুর উপস্থিতি মিলবে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নাক কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞ নাক পর্যবেক্ষণ করে নাকে বাইরের বস্তুর উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকেন। তবে ধাতব ও রঞ্জনরশ্মি অভেদ্য জিনিসের ক্ষেত্রে এক্স-রে করে নাকের মধ্যে বাইরের কোনো বস্তু আছে কি না, তা দেখা যায়।

প্রায় একই রকম পরিস্থিতি, তবে অন্য রোগ

কিছু কিছু নাকের রোগ আছে, যেসব ক্ষেত্রে নাকে বাইরের বস্তু ঢুকলে যে ধরনের উপসর্গ, প্রায় একই ধরনের উপসর্গ হতে পারে। সেগুলো হলো নাকের কোনো টিউমার, সাইনোসাইটিস, সিফিলিস, নাকের ডিপথেরিয়া, জন্মগতভাবেই একদিকের নাক বন্ধ থাকা ইত্যাদি।

চিকিৎসা কেমন হবে?

নাকে কোনো কিছু ঢুকলে প্রথমে কাজ হবে সেটিকে নাক থেকে বের করে আনা। নাক থেকে বাইরের বস্তুটিকে বের করার জন্য অনেক সময় শিশুটিকে অজ্ঞান করার দরকার পড়ে। কখনো কখনো অচেতন না করেই বের করা যায়। তবে এটি বের করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ দক্ষ সার্জনের দরকার পড়বে।

নাকের এসব বস্তু বের করার জন্য দেরি করা উচিত নয়। দেরি করলে ঘুমের মধ্যে কিংবা অন্য সময়ে নাক থেকে বস্তুটি ফসকে শ্বাসনালিতে গিয়ে অবস্থাকে আরো জটিল করে তুলতে পারে।

লেখক : নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ।

Source:ntv

Sharing is caring!

Comments are closed.