শীতে শিশুকে প্রতিদিন রোদে রাখা উচিত কেনো জেনে নিন !

তাপমাত্রা যখন কমতে থাকে, তখন শরীরের সচলতাও কমে যায়। আসলে এই সময় ঠান্ডার কারণে পেশী স্টিফ হয়ে যায়। বয়স্কদের এই সময়ে বসে পরলে উঠতে উচ্ছা করে না, শুয়ে থাকলে শুয়ে থাকতেই মন চায়। আর যদি একবার খাটের কোণায় লেগে য়ায়, তখন এত ব্যথা হয় যে মনে হয় কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে শরীরে মারছে। এইসব ছোট-বড় যন্ত্রণার হাত থেকে কি এই শীতে বাঁচতে চান?

আপনি যখন ছোট ছিলেন, তখন দিদা-ঠাকুমাকে দুপুরে খাবার খাওয়ার পর নিশ্চয় রোদ পোয়াতে দেখেছেন? এমনটা তারা কেন করতেন জানেন? কারণ শীতের সময় নিয়মিত রোদ পোয়ালে পেশীর সচলতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে দেহের অন্দরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দূর হওয়ার কারণে হাড় এত শক্তপোক্ত হয়ে যায় যে চোট-আঘাত লাগার আশঙ্কা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে জয়েন্ট, ঘার এবং গোড়ালির কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। আজকাল এমনটা আর কেউ করেন না। তাই এই সময় সারা শীতকালজুড়ে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি জনিত সমস্যা দেখা যায়।

আসলে ঠান্ডার কারণে বেশিরভাগের শরীরেই এই সময় সূর্যালোক লাগে না। ফলে স্বাভাবিকভাবে শরীরে এই ভিটামিনটির ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করে। ফলে নানাবিধ হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই শীতকালে সুস্থ থাকতে প্রতিদিন কিছুটা সময় রোদ পোয়াতে ভুলবেন না যেন! যদি এমনটা করতে পারেন, তাহলে একদিকে যেমন হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমবে, তেমনি মিলবে আরও অনেক উপকার।

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে

ইমিউন সিস্টেম যত শক্তিশালী হবে, তত নানাবিধ সংক্রমক রোগ দূরে থাকবে। সেই সঙ্গে নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পাবে। তাই তো শরীরের চাঙ্গা রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। না হলে কিন্তু বিপদ! আর এই কাজটি করার জন্য প্রতিদিন সকালে কিছু সময় সূর্যের আলো গায়ে লাগতে দিন। এমনটা করলে শরীরে শ্বেত রক্ত কণিকা এবং গামা গ্লোবিউলিনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। ফলে কোনও ধরনের সংক্রমণই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারবে না।

২. শরীরকে চাঙ্গা এবং ত্বককে সুন্দর করে

রোদে কিছু সময় হাঁটলে খুব ঘাম হতে থাকে। সেই সঙ্গেও জল তেষ্টাও পায়। আর তখন তেষ্টা মেটাতে জল খেয়ে থাকি। যত বেশি করে জল খাই, তত বেশি বেশি প্রস্রাব হয়। ফলে শরীরের অন্দরে জমে থাকা টক্সিন বেরিয়ে যায়। সেই সঙ্গে ঘামের মাধ্যমে ত্বকের ছিদ্রে জমে থাকা ময়লাও বেরিয়ে যায়। ফলে ত্বক এবং শরীর, উভয়ই সুন্দর হয়ে ওঠে। তবে তাই বলে ঘন্টার পর ঘন্টা রোদে হাঁটবেন না যেন, শরীর খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু!

৩. ত্বকের রোগ সারাতে সাহায্য করে

টানা চার সপ্তাহ অল্প সময়ের জন্য সূর্যের আলো গায়ে লাগালে সোরিয়াসিস সহ একাধিক ত্বকের রোগ সেরে যায়। তবে বেলা ১২ টার আগে এই কাজটা করবেন। কারণ বেলা বাড়লে রোদের তেজও বেড়ে যায়। ফলে এমন সময় সূর্য়ের আলো গায়ে লাগাতে কষ্ট হতে পারে।

৪. ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করে

ব্রেস্ট, কোলোন এবং প্রস্টেট ক্যান্সার রোধে সূর্যালোকের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। শুধু তাই নয়, সারা শরীরে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দিয়ে ক্যান্সার সেলকে ধ্বংস করে ফেলতেও সূর্যের আলো বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে বেলা বাড়ার পর বেশিক্ষণ সূর্যের নিচে কাটালে স্কিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই যতটা পারবেন সকাল বেলা সূর্য়ের আলো গায়ে লাগানোর চেষ্টা করবেন।

৫. ঘুম ভাল হয়

যারা অনিদ্রায় ভুগছেন, তারা কাল থেকেই সূর্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে নিন। এমনটা করলে দেখবেন রাতে ঘুম না আসার সমস্যা দূর হবে। আসলে সূর্যের আলো চোখে লাগা মাত্র অপটিকাল নার্ভ মারফত আমাদের মস্তিষ্কে একটি বিশেষ সিগনাল যায়, যা মেলাটোনিন নামে খটি রাসায়নিকের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। এই রাসায়নিকের ক্ষরণ যত বাড়তে থাকে, তত ঘুমে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা হ্রাস পায়।

৬. মন-মেজাজ ভাল করে দেয়

একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে সূর্য়ের আলো গায়ে লাগলে আমাদের মস্তিষ্কে বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যা নিমেষে মনকে ভাল করে দেয়। সেই সঙ্গে শারীরিক ক্লান্তিও দূর করে।

৭. মাল্টিপল স্কলোরোসিস মতো রোগের প্রকোপ কমে

রক্ত সরবরাহকারী শিরা-উপশিরাগুলি যদি স্টিফ হয়ে যায়, তাহলে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত সরবারহ কমে যেতে শুরু করে। আর এমনটা দীর্ঘ দিন ধরে হতে থাকলেই হার্ট অ্যাটাক সহ একাধিক মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই তো শিরা-উপশিরা সংক্রান্ত এমন রোগ যাদের রয়েছে, তাদের প্রতিদিন কিছুটা সময় রোদে কাটানো উচিত। কারণ সূর্যালোক শিরাকে নমনীয় করে তোলে। ফলে অ্যাথেরো স্কেলোরোসিসের অশঙ্কা হ্রাস পায়, সেই সঙ্গে কমে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কাও।

৮. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে

সূর্যের আলো রক্তচাপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে শরীরে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা যাতে বৃদ্ধি না পায়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। আর একথা তো সকলেরই জানা আছে যে কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে হার্টের ক্ষতি হওয়ার কোনও আশঙ্কাই থাকে না। প্রতিদিন সকালে রোদ গায়ে মেখে ১ ঘন্টা বাইরে বসে থাকুন। তাহলেই দেখবেন হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে। সেই সঙ্গে নানাবিধ হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পাবে।

৯. এনার্জির ঘাটতি হতে দেয় না

লোহিত রক্ত কণিকা বেশি বেশি করে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিয়ে শরীরকে যাতে চাঙ্গা রাখতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখে সূর্যালোক। তাই তো কিছু সময় রোদে কাটালে শরীরে এনার্জির ঘাটতি দূর হয়, সেই সঙ্গে দেহের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

১০. শরীরে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়

সূর্যের আলো ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ। এই ভিটামিনটি শরীরে প্রবেশ করা মাত্র রক্তে উপস্থিত কোলেস্টেরলকে স্টেরয়েড এবং সেক্স হরমোনে রূপান্তরিত করে দেয়। ফলে খারাপ উপাদানও শরীরের উপকারে লেগে যায়।

১১. ফাঙ্গাল ইনফেকশন দূরে থাকে

সূর্যের আলো শরীরে লাগলে ত্বকে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা কমে। তাই যারা ড্যাম্প পরিবেশের মধ্যে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটান, তাদের কিছুটা সময় সূর্যালোকের মাঝেও কাটানো উচিত।

১২. স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটায়

সূর্যালোক মস্তিষ্কে একাধিক উপকারি কেমিকেলের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, যা ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধির পাশাপাশি মস্তিষ্কের সার্বিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, যাদের পরিবারে ডিমেনশিয়া বা অ্যালঝাইমারের মতো রোগের ইতিহাস রয়েছে, তাদের প্রতিদিন কিছুটা সময় সূর্যের সঙ্গে কাটানো উটিত।

Source: tinystep

Sharing is caring!

Comments are closed.