শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি

ছোট্ট মৌমিতা হঠাৎ পেটে ব্যথায় চিৎকার করতে শুরু করল। ব্যথা কমছে না দেখে বাবা নিয়ে গেলেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানালেন মৌমিতার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে এবং তা বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে।

আরো বললেন, “আপনার শিশু নিয়মিত মলত্যাগ করছে কিনা এ বিষয়টি আগে থেকেই খেয়াল রাখলে এ সমস্যাটি জটিল আকার ধারণ করতো না।”

বড়দের মতো শিশুরাও কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুরাই কোষ্ঠকাঠিন্যে বেশি ভোগে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যাটি বুঝতে পারে না। তাই বাবা-মায়ের উচিত শিশু কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছে কিনা তা খেয়াল রাখা।

এ সম্পর্কে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এসএম বোরহান উদ্দীন বলেন, “মলত্যাগ করতে শিশুদের যদি বেশি অসুবিধা হয় অথবা বেশি সময় লাগে তবে বুঝতে হবে আপনার শিশু কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগছে। অনেক সময় অসুস্থতার কারণে, কম খাওয়ার কারণে, অপর্যাপ্ত পানি পান করার কারণে শিশুদের সাময়িক কোষ্ঠ্যকাঠিন্য হতে পারে। আবার জন্মগত ত্রুটি, মানসিক প্রতিবন্ধী, শরীরে ক্যালসিয়াম বেশিসহ নানা কারণে দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যের নানা কারণের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে খাদ্যাভ্যাসজনিত কারণ। এক্ষেত্রে বাবা-মা একটু সচেতন থাকলে শিশু কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে দূরে থাকবে।”

কম আঁশযুক্ত খাবার খেলে কিংবা আঁশযুক্ত খাবার না খেলে, পর্যাপ্ত পানি পান না করলে, পায়খানা চেপে রাখলে অনেক শিশু কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগে। আবার গরুর দুধ খাওয়ার কারণেও কোনো কোনো শিশু কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে পারে।

এক্ষেত্রে খাবার-দাবার ও কিছু বিষয় নজরদারিতে রাখলে শিশু খুব সহজেই সুস্থ হয়ে উঠতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা এড়িয়ে চলতে পারবে। তবে জন্মগত কিংবা দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত শিশু কয়েক মাস ধরে মলত্যাগ সমস্যা, বেশ কয়েক দিন পরপর মলত্যাগ হওয়া, পেটে ব্যথা, খাওয়ার প্রতি অনীহা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব, পেট ফুলে যাওয়া, শরীরের ওজন কম বাড়া, পেট শক্ত ও ফুলে থাকাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।

শিশুকে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে রাখতে- যদি খুব ছোট হয়, নিজে নিজে হাঁটতে-চলতে না শেখে তবে তাকে হাত-পা নাড়িয়ে ব্যায়াম করাতে হবে। যদি একটু বড় হয়, নিজে নিজে হাঁটতে পারে তবে তাকে খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপ করতে দিতে হবে। তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা অনেকটাই কম থাকবে।

শিশুরা সাধারণত পটিতে মলত্যাগ করে। পটিতে মলত্যাগের ক্ষেত্রে চেষ্টা করতে হবে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন মলত্যাগ করানোর। এ অভ্যাস করলে শিশু যথাসময়ে মলত্যাগ করার অভ্যাসে রপ্ত হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কম হবে।

একটু বড় যারা নিজে নিজে মলত্যাগ ব্যবহার করতে পারে তাদের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখুন প্রতিদিন মলত্যাগ করছে কিনা, মলত্যাগ করতে বেশি সময় নিচ্ছে কিনা। শিশুর কাছেও জেনে নিতে পারেন তার মলত্যাগ করতে কষ্ট হয় কিনা।

শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস জরুরি। কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত শিশুকে প্রচুর পরিমাণে পানি, তরল খাবার, শাকসবজি, পাকা ফল, বিভিন্ন রকম ফলের শরবত, ইসবগুলের ভূসির শরবত এবং আঁশযুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে।

বারবার দুধ খাইয়ে বা ঘুমের মধ্যে ফিডার খাইয়ে পেট ভরিয়ে রাখলে শিশু সবজি খেতে চাইবে না। তাই শিশু যখন ক্ষুধার্ত থাকবে তখন তাকে ফল, সবজি, ভাত, ডাল খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে।

তবে এ ধরনের খাদ্যাভ্যাস শুধু শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার পরে নয়, শিশুকে নিয়মিত এসব খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তা হলে শিশু সহজেই থাকতে পারবে কোষ্ঠকাঠিন্যমুক্ত।

সূত্র – এসবিএ/এএ

Sharing is caring!

Comments are closed.