জরায়ুর বাহিরে গর্ভধারণ বা একটোপিক প্রেগনেন্সি কি?

জরায়ুর বাহিরে গর্ভধারণ (Ectopic Pregnancy) আমাদের দেশে মাতৃমৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ। এটি সঠিক সময়ে যথোপযুক্ত চিকিৎসা না করার ফলে হয়। লক্ষণীয় যে, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের সাথে সাথে একটোপিক প্রেগনেন্সির হারও বেড়েছে।

  • কারণ সমূহ:  অনেক দিন যাবত চবষারপ ইনফেকশন থাকলে।
  • তলপেটে কোন অপারেশনের ইতিহাস থাকলে।
  • জরায়ুতে IUCD বা কপার-টি পরলে।
  • Fallopian Tube (ডিম্বনালী) এ অপারেশনের ইতিহাস থাকলে।
  • ফেলোপিয়ান টিউবে জন্মগত ত্রুটি থাকলে।
  •  Tubal লাইগেশনের পরে।
  • পূর্বেও একটোপিক প্রেগনেন্সির ইতিহাস থাকলে।
  • জোরপূর্বক গর্ভপাত করালে (ভ্রুণ জরায়ুর ভিতর পেঁৗছানোর আগেই।)
  • বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় Ovulation Inducing Drug খেলে।
  • Post Coital কিছু ইষ্ট্রোজেন জাতীয় বড়ি ব্যবহার করলে।
  • যৌন বাহিত রোগ বা STD এর ইতিহাস থাকলে।
  • IVF এর মাধ্যমে বাচ্চা নিতে গেলে।

লক্ষণ সমূহ:

  • তলপেটের এক পার্শ্বে প্রচন্ড ব্যথা।
  • মাসিক বন্ধ।
  • হালকা রক্তস্রাব।
  • বমি বমি ভাব।
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া (Syncopal Attack)।
  • ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।
  • পেট শক্ত হয়ে যাওয়া।

Ectopic Pregnancy অবস্থায় দু’রকমের জটিলতা হতে পারে। * Acute বা প্রেগনেন্সি স্যাক ফেটে গিয়ে পেটের ভিতর রক্তপাত। এতে দ্রুত রোগীর অবস্থা খারাপ হয়। তাই মৃত্যু ঝুঁকিও অনেক বেশী। * Chronic বা ধীরে ধীরে অনেকদিন যাবত পেটের মধ্যে রক্তপাত। এতে ক্রমান্বয়ে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়। মনে রাখতে হবে তুলনামূলকভাবে একিউট অবস্থাটা বিপজ্জনক।

আমাদের দেশে অনেক বিবাহিত মহিলা তাদের অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণে শেষ মাসিকের তারিখ সঠিকভাবে মনে রাখতে পারেন না। আবার যারা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ্যাত্ব ঘুচানোর চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা হঠাৎ পেটে ব্যথা অনুভব করলেই এটাকে গ্যাসট্রিক আলসার, এপেনডিসাইটিস, প্যানক্রিয়েটাইটিস, মলত্যাগের ও মূত্র নালীর সমস্যা বা মাসিকের ব্যথা ধরে নেন। কিন্তু যখন ব্যথাটা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে, পেট শক্ত লাগে এবং চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে পড়ে কেবল তখনই মেডিসিন অথবা সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে ছুটে যান। আর যখন একটোপিক প্রেগনেন্সি রোগ নির্ণয় (Diagnosis) হয়ে গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট রেফার্ড হোন ততক্ষণে দেখা যায় একটোপিক প্রেগনেন্সি স্যাক ফেটে গিয়ে পেটের ভিতর রক্তক্ষরণ হয়ে রোগীর অবস্থা এমন খারাপ হয় যে, দ্রুত ৫/৬ ব্যাগ রক্ত সহ জরুরী অপারেশনে না গেলে তার মৃত্যু ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তখন কম সময়ের মধ্যে বেশী রক্ত যোগাড় করাটাও রোগীর লোকজনের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। করণীয়: বিবাহিত মহিলা যাদের অনিয়মিত মাসিক হয়, দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা করছেন বা উপরে উল্লেখিত একটোপিক প্রেগনেন্সির কোনো কারণ বিদ্যামান আছে তাদের হঠাৎ তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করা মাত্রই তলপেটের আলট্রাসনোগ্রামের পাশাপাশি প্রেগনেন্সি টেষ্টের জন্য মূত্র পরীক্ষা করা উচিত। অন্যভাবে বলা যায় যে কোনো বিবাহিত মহিলার প্রেগনেন্সি টেষ্ট পজিটিভ পাওয়ার পর বাচ্চা জরায়ুর ভিতরে নাকি বাইরে আছে তা বুঝার জন্য প্রথম দু’মাসের মধ্যে একটা Pregnancy Profile করতে হবে। কেননা ডায়াগনোসিসে নিশ্চিত প্রমাণ মিললে Ectopic Pregnancy Sac Rupture হওয়ার আগেই আমরা অপারেশন না করে শুধু ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমেও চিকিৎসা করে রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি অনেক কমাতে পারি। তাই সবশেষে বলতে হয় একটু সচেতনতাই পারে আপনাকে অনেক বড় বিপদ হতে রক্ষা করতে।

*** এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমএস (গাইনী এন্ড অবস) গাইনী ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ সার্জন আবাসিক সার্জন (গাইনী ও প্রসূতি বিভাগ) শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়া।

 

source: Faily Land

Sharing is caring!

Comments are closed.